কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের প্রয়াণ

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল (Shyam Benegal) ২৩ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স…

shyam benegal

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল (Shyam Benegal) ২৩ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান, বিশেষত সমান্তরাল সিনেমার ক্ষেত্রে, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।

সমান্তরাল চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ
শ্যাম বেনেগাল ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর সিনেমাগুলি বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণ এবং গভীর সামাজিক বার্তার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বেনেগালের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি “অঙ্কুর” (১৯৭৩) থেকে শুরু করে “নিশান্ত” (১৯৭৫), “মন্থন” (১৯৭৬), “ভূমিকা” (১৯৭৭) পর্যন্ত প্রতিটি চলচ্চিত্রই সমালোচকদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল। তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় গ্রাম্য জীবন, প্রান্তিক মানুষের কষ্ট এবং সামাজিক অবিচারের গভীর চিত্র উঠে এসেছে।

   

জাতীয় পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শ্যাম বেনেগাল তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৮টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকারের তরফে তাঁকে ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁর সিনেমাগুলি শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মহলেও সমাদৃত হয়েছে। “মম্মো” (১৯৯৪), “সর্দারি বেগম” (১৯৯৬), এবং “জুবেইদা” (২০০১) এর মতো চলচ্চিত্রগুলি তাঁর সৃষ্টির গভীরতা এবং বহুমুখীতার উদাহরণ।

সামাজিক বার্তা এবং বাস্তবধর্মী গল্প বলার দক্ষতা
বেনেগালের সিনেমাগুলি মূলত সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার উপর জোর দিত। তাঁর সিনেমাগুলির বিষয়বস্তু ছিল ভারতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের গল্প। তিনি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং তাদের সংগ্রামের কথা তুলে এনেছেন এমন বাস্তবধর্মী উপস্থাপনার মাধ্যমে, যা বহু মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।

চলচ্চিত্র জগতের প্রতিক্রিয়া
শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ গোটা চলচ্চিত্র জগৎ। বিশিষ্ট পরিচালক, অভিনেতা এবং সমালোচকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ লিখেছেন, “শ্যাম বেনেগাল একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর কাজ আমাদের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।” অভিনেতা শাবানা আজমি, যিনি বেনেগালের বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, বলেছেন, “একজন শিক্ষক, এক প্রকৃত শিল্পী এবং একজন পথিকৃৎকে হারালাম।”

ব্যক্তিগত জীবন এবং উত্তরাধিকার
শ্যাম বেনেগালের জন্ম ১৯৩৪ সালে। ছোটবেলা থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মুম্বাইয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি রেখে গেছেন।

শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি
শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুতে ভারতীয় সিনেমার এক যুগের অবসান ঘটল। তিনি যেমন তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন, তেমনই তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবেন। চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।