ভোট গণনায় নজিরবিহীন ‘বাউন্সার’ নিরাপত্তা, সপ্তমবার আইএমএ বেঙ্গলের রাজ্য সম্পাদক হলেন শান্তনু

রাজ্যের চিকিৎসক মহলে ফের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত (elected) হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এবং চিকিৎসক শান্তনু সেন (Shantanu Sen)। আইএমএ (IMA) বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন…

Shantanu Sen removed from state medical council

রাজ্যের চিকিৎসক মহলে ফের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত (elected) হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এবং চিকিৎসক শান্তনু সেন (Shantanu Sen)। আইএমএ (IMA) বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজ্য সম্পাদক (state secretary) হিসেবে তিনি সপ্তমবারের (7th time) মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার নির্বাচনে বিশেষ নজর কেড়েছে ভোট গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তা (security) ব্যবস্থা। একদিকে ভোট গণনা চলাকালে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা ছিল, অন্যদিকে গণ্ডগোলের আশঙ্কায় বাউন্সারও (bouncer) রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তার এই কড়াকড়ি ভোট গণনার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

শান্তনু সেনের (Shantanu Sen)এই জয় কেবল তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের জন্যও একটি বড় জয়। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সুকান্ত চক্রবর্তী, যিনি বামপন্থী এবং বিজেপিপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থক, তিনি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। শান্তনু সেন পেয়েছেন ৪৩০টি ভোট, যেখানে সুকান্ত চক্রবর্তী পেয়েছেন মাত্র ১১৬টি ভোট। আইএমএ রাজ্য শাখার এই নির্বাচন প্রায় দুই মাস ধরে চলছিল এবং ভোট গণনা চলাকালীন এই বিশেষ সুরক্ষাব্যবস্থা রাখা হয়।

   

নির্বাচনের ফলাফলের পর তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকরা আনন্দ প্রকাশ করেন এবং তাঁদের মতে, “যে সমস্ত বামপন্থী চিকিৎসকরা তিলোত্তমাকাণ্ডে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই সমস্ত চিকিৎসকদের নির্বাচনীয় প্রার্থী হওয়ার পর তারা পরাজিত হয়েছেন।” এই নির্বাচন তৃণমূলের পক্ষে একটি বড় কৌশলগত জয় হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এছাড়া, নির্বাচনের পর শান্তনু সেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “চিকিৎসকদের অধিকার, তাঁদের নিরাপত্তা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএ কাজ করে যাবে। আমাদের দেশে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের অত্যাচার এবং অবিচার হচ্ছে, তাদের জন্য একটি কার্যকর আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি উল্লেখ করেন যে, চিকিৎসকরা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি, কিন্তু তাঁদের সুরক্ষা এখনো একাধিক ক্ষেত্রে সংকটাপন্ন। তাই, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে এক দৃষ্টান্তমূলক আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানান, যাতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গুন্ডাগিরি, ধর্ষণ এবং খুনের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।

শান্তনু সেন আরও দাবি করেন, “রাজ্য সরকার আইএমএ-এর সহায়তায় যে সমস্ত ভালো কাজ করছে, সেগুলির জন্য সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানোর কথা বলেন।”

এছাড়া, তিনি আইএমএ রাজ্য শাখার পক্ষ থেকে আগামী ২৩ তারিখ সিবিআই অফিস অভিযানের ডাকও দিয়েছেন, কারণ তিলোত্তমাকাণ্ডে চার্জশিট দাখিল না হওয়া নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “নির্যাতিত চিকিৎসকরা ৯০ দিন পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সিবিআই এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকরা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর খুবই উজ্জীবিত, বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে এমন একটি অনুভূতি বিরাজ করছে যে, শান্তনু সেনের নেতৃত্বে আগামী দিনগুলোতে চিকিৎসকদের স্বার্থরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে, তাঁরা আরও জানান যে, তারা রাজ্য সরকারের যেকোনো ভালো কাজে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

রাজনীতির মঞ্চে অনেকেই বলেন, শান্তনু সেনের (Shantanu Sen) শাসকদলের সাথে সম্পর্ক তিলোত্তমাকাণ্ডের পর দূরত্ব বেড়েছিল। তবে, আইএমএ রাজ্য শাখার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে, তিনি রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত “অপরাজিতা বিল” এবং চিকিৎসকরা যে ধরনের হামলার শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

এদিকে, ভোটের পর দেখা গেছে যে, রাজ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে শাসকদলের প্রভাব এখনো অনেক শক্তিশালী এবং চিকিৎসক মহলেও তৃণমূলের সমর্থন একটানা বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে।

অপরদিকে, এই নির্বাচন তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের জন্য শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক জয় নয়, বরং এটি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, সম্মান এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের মাপকাঠি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।