রবিতে সমাবেশ শুভেন্দুর, বিজেপি ‘বাংলা বিরোধী’ কটাক্ষ তৃণমূলের

বাংলার (Bengal) রাজনীতি (Politics) বর্তমানে একটি নতুন দ্বন্দ্বের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বাঙালি অস্মিতার রাজনীতি, অন্যদিকে বিজেপির (BJP) ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের…

Shuvendu Bengali Politics

বাংলার (Bengal) রাজনীতি (Politics) বর্তমানে একটি নতুন দ্বন্দ্বের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বাঙালি অস্মিতার রাজনীতি, অন্যদিকে বিজেপির (BJP) ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একত্রিত করার পরিকল্পনা চলছে। ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাঙালি অস্মিতা’ বা বাঙালির আত্মপরিচয় এবং সংস্কৃতি রক্ষা করার স্লোগান তুলেছিল। এই স্লোগান তৃণমূলের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং রাজ্যের মানুষকে একত্রিত করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তাদের পুরানো কৌশল থেকে কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। এখন তারা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে, যাদের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর হতে পারে।

বর্তমানে বিজেপি একটি সংগঠন তৈরি করেছে যার নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যাঙ্গুইস্টিক মাইনরিটিজ অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠনটি রাজ্যে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের সংগঠিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চাইছে। সম্প্রতি ধর্মতলায় একটি সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা বিজেপি নেতাদের উপস্থিতির মাধ্যমে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের একত্রিত করার চেষ্টার অংশ হতে পারে।সমাবেশ উপস্থিত থাকবেন শুভেন্দু আধিকারি (Shuvendu Adhikari)। এই সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং আসানসোলের বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি, যারা রাজনৈতিকভাবে একে অপরের সহযোগী এবং বিজেপির কাছাকাছি।

   

এদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাকে ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করছে। তৃণমূলের শাসনে স্কুলগুলিতে হিন্দি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে পড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের ভাষাগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। অর্জুন সিংহের মতে, ‘বাংলা বিরোধী’ এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে এবং তাদের দাবি, বাংলায় ভাষাগত বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে, যা সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, তারা বিজেপির পক্ষ থেকে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে, বিজেপির প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী বারবার বলেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস ‘বাঙালি-অবাঙালি’ বিভাজন সৃষ্টি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। শুভেন্দু মনে করেন, বিজেপির লক্ষ্য হল হিন্দু ভোটকে একত্রিত করা এবং সেই ভোটের ভিত্তিতে তৃণমূলের শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিজেপি এখন ভাষাগত সংখ্যালঘুদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে, যা তাদের জন্য একটি নতুন নির্বাচনী দিক হতে পারে।

তবে, বিজেপির এই কৌশলের বিপরীতে কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। এক প্রশ্ন হল, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কি কেবলমাত্র ভাষার কারণে বিজেপির দিকে চলে যাবে? কেননা বিজেপির মূল রাজনীতি এখনও হিন্দুত্ববাদী। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি এখনো একটি রাজনৈতিক আখ্যান তৈরি করতে পারেনি, যা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালি অস্মিতা নিয়ে রাজনীতি করলেও, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বাংলার সংখ্যালঘু ভোটের মধ্যে ঘাঁটতে পারে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই ‘বাঙালি অস্মিতা’ রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে, বিজেপি নিজের হিন্দুত্বের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। যদিও ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের হাতে রয়েছে, তবে বিজেপি এই ভোটে ঘাঁটাতে সক্ষম হতে পারে যদি তারা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়। বিজেপি দাবি করছে, হিন্দিভাষী এবং উর্দুভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে একটি অজানা ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, যাদের ধর্মীয় ও ভাষাগত ভিত্তিতে ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে দেখা হয়। এই ভোটব্যাঙ্ককে একত্রিত করে তৃণমূলের শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।

তবে, প্রশ্ন থেকে যায়— ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কি কেবলমাত্র ভাষার ভিত্তিতে বিজেপির প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাবে? বিজেপির রাজনীতি হিন্দুত্ববাদী হওয়ায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট এই দলে চলে যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তৃণমূলের বিরোধিতায় বিজেপির সামনে হিন্দুত্বকে ছাড়িয়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক আখ্যান তৈরি করার সুযোগ নেই, যা বাংলার মানুষের মধ্যে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস তার নির্বাচনী প্রচারে বাঙালি অস্মিতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপি ভাষাগত সংখ্যালঘুদের সংগঠিত করতে চাইছে।

বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বাংলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাছে এক গ্রহণযোগ্য বিষয় হয়ে উঠবে কিনা, তা সময়ের সঙ্গে দেখতে হবে। এই রাজনীতির নতুন মোড় বাংলার রাজনীতির ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করতে পারে।