মঙ্গলবার লোকসভায় ‘এক দেশ এক ভোট’ (One nation one vote) সংক্রান্ত দু’টি বিল পেশ করেছে কেন্দ্র সরকার, যার বিরুদ্ধে বিরোধীরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল (Arjun Ram Meghawal) সংসদের নিম্নকক্ষে এই বিলে পেশ করেন। এগুলি হল সংবিধান (১২৯তম সংশোধনী) বিল এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধনী) বিল। এই বিলে এক দেশে এক ভোট ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির ভোট একসাথে পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছে।
বিরোধী দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল (TMC), সমাজবাদী পার্টি (SP) এবং ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের অন্যান্য দলগুলির মধ্যে একাত্মতা দেখা গেছে এই বিলের বিরুদ্ধে। তাদের মূল আপত্তি হল যে এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোতে আঘাত হানবে এবং এর মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। কংগ্রেস, তৃণমূল ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা দাবি করেছেন, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে বিরোধীদের মতামত এবং রাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করা হবে। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি চেষ্টা, যা রাজ্যগুলির অধিকারকে সরিয়ে নেবে।
তৃণমূল (TMC) সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোকে আঘাত করবে, কারণ রাজ্যগুলোকে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। বিরোধীদের মতে, এই বিল পাস হলে একে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হবে, যা দেশের বৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এছাড়া, ডিএমকে (ড্রাভিডিয়ান মুনেত্রা কাঝাগম) সাংসদ টিআর বালু অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের কাছে এই বিল পেশ করার জন্য কোনও বৈধতা নেই, কারণ তাদের কাছে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কিভাবে একটি সংবিধান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিল এমন পরিস্থিতিতে পেশ করা হচ্ছে, যখন সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেছে।
এছাড়া, মিম (মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-এ-ইসলামি) সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও এই বিলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের বিল দেশের একতা ও সংহতির ক্ষতি করতে পারে, এবং রাজ্যগুলির ক্ষমতাকে সংকুচিত করবে।
বিরোধী দলের নেতারা আরও যুক্তি দেন, এটি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় গুরুতর পরিবর্তন আনবে, যা দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের মতে, এই প্রস্তাব দেশকে একধরনের একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে রাজ্যগুলির ভূমিকা এবং স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই বিলের পক্ষে বিজেপি এবং তার মিত্ররা যুক্তি দিয়েছেন যে, এক দেশে এক ভোট ব্যবস্থা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে, এবং সরকারের কাজকর্মের মধ্যে সঙ্গতি আনবে। তবে বিরোধীরা এই যুক্তির সাথে একমত নন, এবং তারা দাবি করছেন যে এই বিল ভারতের সাংবিধানিক ঐতিহ্য এবং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সবশেষে, এই বিলের পেশে বিরোধীদের হইচই অব্যাহত ছিল। লোকসভায় এই বিল পেশ করার পর থেকেই সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এর মাধ্যমে সংবিধানের মূল কাঠামো ও রাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসন সুরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছে, এবং এই বিলে যে সংকট তৈরি হতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক করেছে।