রাজ্যের পুরসভা (Municipal) গুলিতে নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Corruption) মামলায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটছে। এর মধ্যে অন্যতম কলকাতা পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত অয়ন শীল (Ayon Shil), যিনি এর আগেও শিক্ষকের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, এবার জামিনের (Bail) জন্য কলকাতা হাই কোর্টের (High Court) দ্বারস্থ হয়েছেন।
গত সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, অয়ন শীল (Ayon Shil) তার মামলার শুনানি এবং জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, এই মামলায় জামিন পাওয়ার জন্য তিনি যোগ্য। ৪৫০ পাতার পিটিশন ফাইল করে অয়ন শীল বলেছেন যে, তিনি কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন এবং তাই জামিন পেতে পারেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে যে, এই মামলার শুনানি আগামী বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অয়ন শীলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি উল্লিখিত। ইডি ২০২৩ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে কলকাতা হাই কোর্ট তাকে জামিন মঞ্জুর করে। তবে সিবিআইয়ের মামলার কারণে তিনি জেলে বন্দি আছেন। সিবিআই তাকে পুরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে।
পুরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগঃ
অয়ন শীলের (Ayon Shil) বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিভিন্ন পুরসভায় প্রভাব খাটিয়ে নিজের প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে, শীল পুরনিয়োগের সঙ্গে জড়িত একটি বিশাল দুর্নীতির শিকড় ছাড়াও নানা বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তদন্তে জানানো হয়েছে যে, তিনি পুরসভার চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের জন্য এক ধরনের অবৈধ সুবিধা প্রদান করতেন এবং এর মাধ্যমে বিশাল আর্থিক লাভ অর্জন করতেন।
এছাড়া, চুঁচুড়া এবং কলকাতায় শীলের বাড়ি এবং অফিসে অভিযান চালিয়ে ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। এসব সম্পত্তির সূত্রে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তাছাড়া, ইডি কর্তৃক অভিযোগ আনা হয় যে, এই দুর্নীতির সঙ্গে নারী যোগও রয়েছে। তদন্তের গতিপথ দেখে ইডি শীলের বিরুদ্ধে আরও কিছু দিক খুলে ধরেছে।
ইডির মামলায় জামিন পেলেও সিবিআইয়ের মামলা রয়েছে:
অয়ন শীল (Ayon Shil) গত ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে ইডি মামলায় জামিন পান। কলকাতা হাই কোর্ট (High Court) তার জামিন মঞ্জুর করে, এবং ১০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তসহ একাধিক শর্তের সঙ্গে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। জামিন পাওয়ার পরেও তিনি সিবিআইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন।
কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) জামিনের আবেদন করার আগে শীল জানিয়েছেন, তিনি সিবিআইয়ের মামলায়ও জামিন প্রাপ্তি চান। তার মতে, পুরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পরই তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
কোর্টে শুনানি এবং মামলা প্রক্রিয়াঃ
উচ্চ আদালত সূত্রে জানা গেছে, শীলের জামিনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে এবং বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর মামলার শুনানি হতে পারে। শীলের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি উত্থাপন করার আগে জামিন দেওয়া উচিত।
তবে সিবিআই এবং ইডি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শীলের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত চলছে। এই মামলায় জামিন দেওয়া হলে তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে তাদের পক্ষ থেকে সতর্কতা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
এছাড়া, সরকারি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন যে, এমন দুর্নীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, এই ধরনের মামলায় জামিন দেওয়া হলে সমাজে ভুল বার্তা চলে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে অন্যরা একই ধরনের অপরাধে লিপ্ত হতে পারে।
অয়ন শীলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগঃ
অয়ন শীলের (Ayon Shil) বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে, যা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে শুধু পুরনিয়োগে দুর্নীতি নয়, শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। সেই সময়, শীল বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য টাকা নিয়ে নিয়োগ প্রদান করতেন, যা জনমানসে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, সে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগ ঘটিয়েছেন।
কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) জামিনের আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে অয়ন শীল (Ayon Shil) এবং তার আইনজীবী চেষ্টা করছেন, যাতে তাকে জামিন দেওয়া হয় এবং তিনি জেল থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলার শুনানির পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অভিযোগের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটঃ
কলকাতা পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়ন শীলের (Ayon Shil) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এখনো শেষ হয়নি এবং শীলের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, জামিন পেলে অয়ন শীল মুক্তি পাবেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আদালতের জন্য বড় ধরনের পরীক্ষার বিষয় হতে পারে।
এই মামলার মাধ্যমে রাজ্যের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে দুর্নীতির নেটওয়ার্ক এবং তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। আগামিতে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও তদন্ত চালিয়ে যাবে এবং এই মামলার ফলাফল রাজ্যের রাজনীতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।