টিকিট (Ticket) না কেটে ট্রেনে উঠলে বড় বিপদে পড়বেন, এমনই সতর্কবার্তা রেলের (Railway)। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় সম্প্রতি বিশেষ (Special) টিকিট (Ticket) পরীক্ষা (Checking) প্রমাণ করে দিয়েছে, বিনা টিকিটে (without ticket) ট্রেনযাত্রীরা যে বড় বিপদে পড়তে পারেন, তা যে কোনো দিন বাস্তবে পরিণত হতে পারে। রেল কর্তৃপক্ষ একাধিক বার আগেই ঘোষণা করেছে, বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং তা থেকে যাত্রীদের সাবধান করতে এবার এক বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে, শুধু জরিমানা আর আয় বাড়েনি, রেল কর্তৃপক্ষ আশা করছে এর মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।
সম্প্রতি শিয়ালদহ (Shealdah)ডিভিশনের পিসিসিএম-এর নেতৃত্বে রেলের একটি বিশেষ দল ‘জাগৃতি’ নামে একটি বিশেষ ট্রেনে চড়ে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বারাসাত স্টেশন পর্যন্ত বিশেষ টিকিট চেকিং অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে অংশ নেয় রেলের টিকিট পরীক্ষক দল, যাদের কাজ ছিল ট্রেনের চলন্ত অবস্থায় এবং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করা। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ যাত্রীই বিনা টিকিটে ট্রেনযাত্রা করছেন, আর তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
এই অভিযানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সকাল সাড়ে নটা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত, যার মধ্যে মোট ৮৭৮ জন যাত্রীর টিকিট পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৭২৮ জন যাত্রীকে বিনা টিকিটে যাত্রা করার জন্য ধরা হয়। বিনা টিকিটে যাত্রা করা এসব যাত্রীদের থেকে রেল কর্তৃপক্ষ মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকা জরিমানা আদায় করে। সব মিলিয়ে এই বিশেষ অভিযানটি থেকে রেলের মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা।
এমনকি এই অভিযানটি শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অভিযানটি ঘোষণার পরই টিকিট বিক্রির পরিমাণ প্রায় তিন থেকে চার লক্ষ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে বিনা টিকিটে যাত্রা করার ঝুঁকি এড়িয়ে টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়েছে। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযান শুধু আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই এটি পরিচালিত হয়েছে। বিনা টিকিটে যাত্রীদের আটকে জরিমানা আদায় করে রেলযাত্রীদের সঠিক পথে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষের এই বিশেষ অভিযান শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় আরও বিস্তৃত হতে চলেছে। বারাসাত সিটিআই শুভেন্দু মালাকার জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে এই অভিযানটি বনগাঁ, হাসনাবাদ এবং শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও চালানো হবে। এর ফলে, যাত্রীদের মধ্যে সতর্কতা আরও বাড়বে এবং যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিনা টিকিটে যাত্রা করেন, তারা যেন পরবর্তী সময়ে এই ভুলটি না করেন, তার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
বর্তমান প্রযুক্তি যুগে, রেল কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের সুবিধার্থে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন আর টিকিট কাটতে যাত্রীদের অনেক দূর যেতে হয় না। আগে যেখানে ১ কিলোমিটার দূরত্বে টিকিট কাটার প্রয়োজন ছিল, এখন তা কমিয়ে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত করতে পারছেন যাত্রীরা। অর্থাৎ, যাত্রীদের টিকিট কেনার সুবিধা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে, যাতে করে তারা বিনা টিকিটে যাত্রা করার ঝুঁকি না নেন।
তবে, রেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, শুধু টিকিট চেকিংয়ের উপর ভরসা করে এই বিষয়টি সমাধান হবে না। তাই যাত্রীদের সচেতন করা, যেমন টিকিট কেনা, ট্রেনে উঠার আগে ঠিকমতো টিকিট পরীক্ষা করা, এগুলোর দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে যে, বিনা টিকিটে যাত্রা করলে শুধু জরিমানা নয়, বরং একাধিক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হতে পারে।
রেলের এই ধরনের বিশেষ অভিযানগুলি আসলে একটি সুসংবাদ, কারণ এর মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে আইনানুগ আচরণ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে রেলের আয়ও বাড়তে থাকে। তবে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে রেল কর্তৃপক্ষ বারবার মনে করিয়ে দিতে চাইছে, ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট কাটাই সবচেয়ে ভাল এবং আইনসঙ্গত কাজ।