চা-এর চুমুকে চিন্তা! রাজ্যে বাড়ছে চায়ের দাম

রাজ্যের (State) চা (Tea) বাণিজ্য বর্তমানে এক কঠিন সংকটে পড়েছে। চা-প্রেমী বাঙালির জন্য এটি একটি বড় দুঃসংবাদ, কারণ একদিকে চায়ের দাম (price) লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে…

Expert Warning: Sip Green Tea When You Wake Up for Health Benefits

রাজ্যের (State) চা (Tea) বাণিজ্য বর্তমানে এক কঠিন সংকটে পড়েছে। চা-প্রেমী বাঙালির জন্য এটি একটি বড় দুঃসংবাদ, কারণ একদিকে চায়ের দাম (price) লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে (hike), অন্যদিকে বাজারে নকল চায়ের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চায়ের স্বাদ এবং গুণমান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি ভোক্তাদের জন্য তো বিপদই, পাশাপাশি রাজ্য সরকারের জন্যও এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ।

চায়ের (Tea) দাম বেড়ে চলেছে অবিশ্বাস্যভাবে, বিশেষ করে কেজিতে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ আবহাওয়া, যার কারণে চায়ের উৎপাদন গত বছর থেকে অনেকটাই কমে গেছে। ২০২২ সালে যেখানে ৪১.৪ লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৪৩.৩ লক্ষ কেজি হয়েছিল, কিন্তু চলতি বছর অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাত্র ৩১.৬ লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। ফলে, চায়ের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়ে গেছে।

   

চা (Tea) শিল্পে আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, নকল ‘দার্জিলিং চা’ বাজারে প্রবাহিত হচ্ছে। নেপাল থেকে কীটনাশক স্প্রে করা নিম্নমানের চা (Tea)গোপনে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে ঢুকে ‘দার্জিলিং চা’ নাম নিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এটি চা-প্রেমীদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ চায়ের স্বাদ এবং গুণমানের ব্যাপারে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে এই নকল চায়ের প্রবাহ রোধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সীমান্তে কোচবিহার এবং পানিট্যাঙ্কিতে দুটি বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে নকল চায়ের উপস্থিতি দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

যদিও রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে, তবুও চা-বাণিজ্যে অস্থিরতা কমছে না। চা (Tea) শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষ করে চা শ্রমিকরা এই পরিস্থিতির কারণে উদ্বিগ্ন। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত ভট্টাচার্যও চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

নকল চায়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের অভিযোগ রয়েছে। তারা মনে করছেন, এই সমস্যা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনা সত্ত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলস্বরূপ, দার্জিলিং অঞ্চলের অনেক চা বাগান গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যের একাধিক চা বাগান মালিক এবং শ্রমিকরা এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

অন্যদিকে, দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের জন্য চায়ের বাজারে অসুবিধা হচ্ছে। খুচরো বিক্রেতারা বেশি দামে ‘ভালো চা’ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, এবং চায়ের গুণমান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, নামী চা কোম্পানিগুলি কম উৎপাদন হওয়ার সুযোগ নিয়ে দাম বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চা (Tea)উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে অকশনে কেজি প্রতি চায়ের দাম ছিল ১৬৪.১৬ টাকা, যা এবছর নভেম্বরে ১৯০.৬৮ টাকায় পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চায়ের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বিভিন্ন চা (Tea) কোম্পানি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং তারা প্যাকেজিং এবং মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎপাদন কম হওয়ার কারণে দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে একাধিক চা কোম্পানি। এই অবস্থায় ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়ছে, কারণ খুচরো বাজারে চায়ের দাম এমনিতেই চড়া।

এদিকে, রাজ্য সরকার চা (Tea) শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চা শ্রমিকদের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের উন্নতির জন্য সরকার ইতিমধ্যেই নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, কিন্তু চায়ের দাম বৃদ্ধির কারণে চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান আরো খারাপ হতে পারে।

এমন এক পরিস্থিতিতে, চা-প্রেমীরা কিছুটা হতাশ হলেও রাজ্য সরকারের আশ্বাসে কিছুটা আশা দেখছেন। তবে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপগুলি কার্যকর হতে সময় নেবে এবং তখন পর্যন্ত চায়ের বাজারে সংকট বজায় থাকবে। চায়ের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, নকল চায়ের আগ্রাসন রোধে রাজ্য সরকারের কৌশলও যথাযথ হতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সঠিক মানের চা (Tea) খেতে পারেন এবং চা বাণিজ্যেও অস্থিরতা কমে আসে।

রাজ্য সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও চায়ের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি চা-প্রেমীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম (price) বৃদ্ধির (Hike)সাথে সাথে নকল চায়ের প্রবাহ এবং উৎপাদন কম হওয়া বিষয়টি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চা (Tea) শিল্পের উন্নতি এবং ভোক্তাদের স্বার্থে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।