আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত এক তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুন হওয়ার পর থেকে রাজ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এই ঘটনা নিয়ে সিবিআইয়ের (CBI) তদন্তে সঠিক ফল পাওয়া না যাওয়ায় কংগ্রেস (Congress) রাজ্য সরকার ও সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। নিজাম প্যালেস (Nizam Palace) ঘেরাও করেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি চলে, এরপর সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা এই প্রতিবাদ এখন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ এটি একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন, অন্যদিকে রাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতা:
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান সাফল্য না আসায় অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদীরা দাবি করছেন যে, সিবিআই বা রাজ্য সরকার উভয়ই ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করছে না, যার ফলে খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সিবিআইয়ের উপর মানুষের আস্থা কমে গেছে, বিশেষ করে এই ঘটনা নিয়ে কোনো সঠিক তথ্য সামনে না আসায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।
চিকিৎসকের পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন মহল এই ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু যখন সঠিক তদন্তের ফল পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তা সিবিআইয়ের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
কংগ্রেসের প্রতিবাদে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি:
কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদে নামেছে এবং সিবিআইয়ের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতা-নেত্রীরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক দলের অবহেলা ও সিবিআইয়ের অকার্যকর তদন্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কংগ্রেসের উদ্যোগে নিজাম প্যালেস ঘেরাও অভিযান শুরু হয়। এদিন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা নিজাম প্যালেসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন, যেখানে তারা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী কংগ্রেস কর্মীরা সিবিআই এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তারা ওই তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে ন্যায়বিচারের দাবি জানান। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি:
নিজাম প্যালেস ঘেরাও অভিযানের সময় পুলিশ ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ কংগ্রেস কর্মীদের অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস কর্মীরা অভিযোগ করেন যে, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দিচ্ছে এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দমনপীড়ন করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা, যিনি ওই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই আমাদের দাবি থেকে পিছু হটব না। সিবিআই এবং রাজ্য সরকার এই ঘৃণ্য অপরাধের সঠিক তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে, আর আমরা তাদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। পুলিশের দাবি, প্রতিবাদকারী কংগ্রেস কর্মীরা যে ভাবে রাস্তা আটকে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছিল। তবে, এই ঘটনাটি যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ভবিষ্যত পদক্ষেপ:
কংগ্রেসের প্রতিবাদ কর্মসূচি এখন রাজ্য রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় নিয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রতি বিরোধী দলের ক্ষোভ এবং সিবিআইয়ের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর বিষয়টি গভীর মনোযোগের দাবি রাখে। কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একাধিক বার ঘোষণা করা হয়েছে যে, যদি এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত না হয় এবং খুনিরা শাস্তি না পায়, তাহলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কংগ্রেসের দাবি, এই ঘটনায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতার জন্য রাজ্য সরকারও দায়ী, কারণ সঠিক তদন্তের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা আরও দাবি করছেন, রাজ্য সরকার যদি এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে রাজ্যজুড়ে আরও বড় প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হবে।
এদিকে, রাজ্য সরকার সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করতে চায়নি, তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পরিস্থিতি যেকোনো সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের (CBI) ব্যর্থতা এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক আকার ধারণ করতে পারে। কংগ্রেসের প্রতিবাদ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাগুলি রাজ্যের রাজনৈতিক আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। তবে, একটাই বিষয় স্পষ্ট, তা হল— এই ঘটনায় ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবির প্রতি জনগণের ক্ষোভ। এখন দেখার বিষয়, সিবিআই এবং রাজ্য সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এবং পুণরায় জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে।