পাটনার জেলাশাসক চন্দ্রশেখর সিং-এর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ এখন শিরোনামে। বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)-এর পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালীন, তাঁদের মধ্যে এক পরীক্ষার্থীকে থাপ্পড় (slap) মারার ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে পাটনার কুম্ভারার বাপু পরীক্ষাকেন্দ্রে, যেখানে বিপিএসসি-র ৭০তম সমন্বিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, চন্দ্রশেখর সিং পুলিশের ঘেরাটোপে দাঁড়িয়ে এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত। তিনি পরীক্ষার্থীদের জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দেন। এর পরে তিনি কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে এক পরীক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন। এরপর ওই পরীক্ষার্থীকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে যায় এবং জেলাশাসক অন্যান্য ছাত্রদের ওপর চিৎকার করেন।
জেলাশাসক চন্দ্রশেখর সিং ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “প্রতিবন্ধকতার কারণে রাস্তায় আটকে পড়া গাড়িগুলির মধ্যে দু’জন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ছিল। আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছি, কিন্তু কারও আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।”
বিপিএসসি-র ৭০তম সমন্বিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে প্রায় ৪০০ পরীক্ষার্থী বাপু পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের দাবি, সামাজিক মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে।
তবে, এই অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করেছেন বিপিএসসি চেয়ারম্যান পারমার রবি মনুভাই। তিনি বলেন, “কিছু ছাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। যদিও রাজ্যের ৯০০টিরও বেশি কেন্দ্রে পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনও অভিযোগ কমিশনের কাছে জমা পড়েনি।”
VIDEO | Patna DM Dr Chandrashekhar Singh slaps a #BPSC aspirant protesting outside an examination centre in the city.
(Full video available on PTI Videos – https://t.co/n147TvrpG7) pic.twitter.com/dDE0l8BX8t
— Press Trust of India (@PTI_News) December 13, 2024
এদিকে, পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ অন্যরকম। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেও অনেক পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্র বা ওএমআর শিট পায়নি। কেউ কেউ ১০ মিনিট দেরিতে প্রশ্নপত্র পেয়েছে, আবার অনেকের প্রশ্নপত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এক পরীক্ষার্থী সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, “কিছু পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্র পায়নি, আবার যারা পেয়েছিল তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের পরীক্ষার ঘর তালাবন্ধ ছিল।”
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পরেই সমাজমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই এই ঘটনাকে প্রশাসনিক অত্যাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং জেলাশাসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
বিক্ষোভ ও বিতর্কের মাঝেও বিপিএসসি চেয়ারম্যান স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। তবে ছাত্রদের এই অভিযোগ ও বিক্ষোভ আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই ঘটনা বিহারের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন ফেলেছে। একদিকে প্রশাসন পরীক্ষাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দাবি করছে, অন্যদিকে পরীক্ষার্থীরা বঞ্চনার কথা তুলে ধরছেন। পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার কী সমাধান হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।