কলকাতাকে (Kolkata) দারিদ্র্য (poor) মুক্ত (free) করতে পাইলট (pilot) প্রোজেক্ট (project) পুরসভার (municipality)। কলকাতা(Kolkata), ভারতের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম, এক সময় ছিল একটি অজানা ভয়ংকর শহর। যেখানে মশার উৎপাত ছিল অতিমাত্রায়, খোলা ড্রেন ছিল রাস্তায়, ভাঙাচোরা রাস্তা আর লোডশেডিং ছিল সাধারণ ব্যাপার। সেই শহরের মধ্যে যে কতটা ভোগান্তির জীবন কাটাতে হত কলকাতাবাসীকে, তা ভাবতে গেলে মনে হয় যেন আজকের কলকাতা আর তখনকার কলকাতার মধ্যে পৃথিবীখানি পার হয়ে গেছে। তবে, সময়ের সঙ্গে কলকাতাও বদলে গেছে। উন্নয়নের দৌড়ে কলকাতা আজ অনেক এগিয়ে, কিন্তু এই পরিবর্তনের মাঝেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে শহরের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে।
অতীতের কলকাতা (Kolkata)ছিল অরাজকতার শিকার। নানা সমস্যা, যেমন উন্মুক্ত ড্রেন, খোলা ভ্যাট, অসুস্থ পরিবেশ এবং উন্নত নগর ব্যবস্থাপনার অভাব—এই সমস্ত সমস্যার কারণে একসময় কলকাতা ছিল শহরের সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর স্থানে। তবে আজকের কলকাতা বদলেছে অনেকটাই। বড় বড় ইমারত, আধুনিক হোটেল, এবং উন্নত সড়ক ব্যবস্থা কলকাতাকে এক নতুন চেহারা দিয়েছে। খোলা ড্রেন এখন আর চোখে পড়ে না, বরং সেগুলির জায়গায় আধুনিক সিস্টেম তৈরি হয়েছে। খোলা ভ্যাটের বদলে কমপ্যাক্টর মেশিন বসানো হয়েছে, যা শহরের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। শহরের নানা প্রান্তে ফ্লাইওভার তৈরি হওয়ায় যানজট অনেকটাই কমেছে, যা কলকাতাবাসীর জন্য এক বড় স্বস্তি।
এতসব উন্নতির মধ্যে কলকাতার (Kolkata)একটি বড় সমস্যা ছিল এবং এখনো আছে, তা হলো শহরের একাংশ মানুষের দারিদ্র্য। যাদের এখনও শহরের সুবিধাগুলি ভোগ করার সুযোগ মেলেনি। উন্নতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাদের জীবনযাত্রাও বদলানো প্রয়োজন, আর এই উদ্দেশ্যে কলকাতা পুরসভা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। শহরের পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য কলকাতা পুরসভা একটি নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল, শহরের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের পুনর্বাসিত করে তাদের স্বাবলম্বী করা এবং সামাজিক মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা।
কলকাতা (Kolkata)পুরসভার (municipality)বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, বর্তমানে কলকাতার ১৬টি বস্তিতে এই প্রকল্পটি চালু হবে। তাদের লক্ষ্য হলো এই বস্তির মানুষদের সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা, যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের নতুন দক্ষতা অর্জন করানো হবে, এবং এই প্রশিক্ষণ শেষে তারা যাতে সঠিক উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হবে।
স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, “শহরে হাজার হাজার মানুষ বস্তিতে বাস করেন এবং তারা আর্থিক কারণে শহরের সেরা সুবিধাগুলি উপভোগ করতে পারেন না। কিন্তু তারা আমাদের সহনাগরিক, তাদের জীবনমান উন্নত করা আমাদের দায়িত্ব।” তিনি আরও বলেন, যে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বস্তির বাসিন্দারা রয়েছেন, তাদের সহযোগিতায় শহরকে দারিদ্র্য মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই এই প্রকল্প শুরু হচ্ছে। আপাতত ২০টি ওয়ার্ডে এই কাজ শুরু হবে, এবং ভবিষ্যতে কলকাতার (Kolkata) সকল বস্তিতেই এই প্রকল্পের কার্যক্রম বিস্তার লাভ করবে।
এছাড়া, এই প্রকল্পের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বড় উদ্যোগও রয়েছে। দেশব্যাপী ২৫টি বড় শহরে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘আরবান ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করা হয়েছে। কলকাতাও (Kolkata)তার অংশ হিসেবে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে, এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে তিন মাসের মধ্যে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।
এছাড়া, কলকাতা (Kolkata)পুরসভা (municipality)একটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য ‘আরবান ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করবে। এর মাধ্যমে বস্তিবাসীদের রাস্তা, ড্রেন, কমিউনিটি সেন্টার, শৌচাগার নির্মাণের কাজে যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি, এই কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো দেবে শহরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বস্তির মানুষের সামাজিক অবস্থান শক্তিশালী করা হবে এবং তারা যেন একে অপরের সহযোগিতায় নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে, সে জন্য একটি ‘আরবান কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’ তৈরি করা হবে।
এই কার্যক্রমের পরিচালনা ও তদারকি করার জন্য কলকাতা (Kolkata)পুরসভা (municipality)একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে, যার চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন কলকাতা (Kolkata)পুর কমিশনার ধবল জৈন। কমিটিতে রয়েছেন পুরসভার জয়েন্ট মিউনিসিপ্যাল কমিশনার জ্যোতির্ময় তাঁতি, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি নরেন্দ্রনাথ দত্তসহ মোট ১১জন সদস্য।
কলকাতা (Kolkata) পুরসভা (municipality)আশা করছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতার পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। একসময় কলকাতা ছিল মশা ও মাছির শহর, কিন্তু এখন শহরের উন্নতির ধারাবাহিকতায় একটি নতুন কলকাতা (Kolkata) গড়ার পথে এগিয়ে চলছে কলকাতা পুরসভা, যা প্রকৃত অর্থে শহরের প্রতিটি নাগরিকের উন্নয়নকেই প্রাধান্য দেবে।