বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতিতে কিছু মানুষ এমন হয়ে থাকেন, যারা সরাসরি ক্ষমতায় না থেকেও প্রচুর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এমনই একজন হলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriyo Mallik) । তিনি রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এবং তাঁর ওপর মানুষের আস্থা ছিল অনেক গভীর। কিন্তু বর্তমানে তিনি এক ভয়াবহ অভিযোগের সম্মুখীন, এবং তদন্তের মধ্যে রয়েছেন। রেশন দুর্নীতির মামলায় তিনি বর্তমানে ধৃত, এবং জামিনে মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। তবে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) আদালতে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে দাবি করেছে যে, বালু জামিন পেলে তদন্ত প্রভাবিত (powerful) হতে পারে।
বুধবার, বিশেষ ইডি আদালতে রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। শুরুতেই ইডির আইনজীবী আদালতে দাবি করেন যে, বালু অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর প্রভাব শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে সরাসরি প্রভাব রাখতে সক্ষম।
এছাড়াও, আদালতে ইডির আইনজীবী আরো বলেন, “যতদিন বালু জামিনে মুক্ত থাকতে পারবেন, ততদিন এই তদন্তের উপর তাঁর প্রভাব থাকতে পারে। তাঁকে জামিন দেওয়া হলে, তিনি তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন।” তাঁর এই মন্তব্য ছিল অত্যন্ত গুরুতর, কারণ এতে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে, বালু তার ক্ষমতা এবং প্রভাব ব্যবহার করে তদন্তের ফলাফলে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
অন্যদিকে, বালুর আইনজীবী আদালতে পাল্টা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “বালু বহুদিন ধরেই রাজ্যের মন্ত্রী নন। তাই তিনি আর প্রভাবশালী নন। তিনি সাধারণ একজন নাগরিক, এবং তাঁর জামিন প্রাপ্তি কোনোভাবেই তদন্ত প্রভাবিত করবে না।” তাঁর আইনজীবীর মতে, জামিনের শর্তে বালুকে মুক্তি দেওয়া উচিত, কারণ তিনি সমাজের একজন সম্মানিত নাগরিক এবং জামিন পেলে তিনি তদন্তের সঙ্গে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করবেন না।
তবে, ইডির আইনজীবী এই বক্তব্যে একমত হননি। তিনি ফের বলেন, “রেশন দুর্নীতির মূল কিংপিন বালু। এই মামলায় যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, প্রত্যেকেই বালুর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি এই দুর্নীতির মূল মস্তিষ্ক এবং সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এমনকি রাজনৈতিকভাবে এখনও তিনি প্রভাব খাটাতে সক্ষম। তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা একাধিক ঘটনায় স্পষ্ট।”
তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী আরও উল্লেখ করেন যে, বালু রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট শক্তিশালী। যদিও তিনি বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই, তবে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব এখনও অনেক কিছুতেই কাজ করতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলার সময় জামিন পাওয়ার পর যদি তিনি তাঁর প্রভাব খাটান, তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নাও হতে পারে।
এক্ষেত্রে, ইডির পক্ষ থেকে একটি গুরুতর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, যা হল, বালু জামিন পেলে তদন্তের গতি এবং স্বচ্ছতা প্রভাবিত হতে পারে। এই তদন্তের সময়, যদি বালু মুক্ত হন, তাহলে তিনি তাঁর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে সাক্ষীদের ভয় দেখাতে বা সাক্ষ্য বদলানোর চেষ্টা করতে পারেন। এমনকি, তদন্তের অন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিও ধাক্কা খেতে পারে।
অন্যদিকে, বালুর আইনজীবী আদালতে বলেন, “আমার মক্কেল একজন সম্মানিত নাগরিক। জামিন পেলে তিনি তদন্তে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবেন না। তদন্ত চলাকালীন সব ধরনের সহযোগিতা করবেন এবং কোনো প্রকার প্রভাব খাটাবেন না।” যদিও বালুর আইনজীবী তাঁর মক্কেলের চরিত্রের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন, তবে ইডির আইনজীবী তাতে একমত হননি।
এদিকে, বিশেষ ইডি আদালত বিচারকের সামনে এই মামলা চলতে থাকে। দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে, বিচারক আগামী ২১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। এর মানে, আগামী ২১ ডিসেম্বর আদালত এই মামলার পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপর আলোচনা করবে এবং জামিনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এই মামলার ফলাফলে বিশেষ নজর থাকবে, কারণ রেশন দুর্নীতি মামলা দেশের বড় ধরনের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষ করে, এই ধরনের মামলায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রভাব বৃহত্তর হবে।
আসন্ন শুনানি এবং মামলার পরবর্তী অগ্রগতি নিয়ে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন। পাশাপাশি, রাজ্যের রাজনীতি এবং দুর্নীতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম হতে পারে, যা আগামী দিনে রাজনীতির দুনিয়ায় এক নতুন মোড় নিতে পারে।