টানা ২ বছর (after-2 years) অপেক্ষার (waiting) অবসান, হাইকোর্টের (high court) নির্দেশে (order) আমেরিকা (america) পাড়ি দেবেন প্রেমিকা (girlfriend)। প্রেমের (love) শক্তি সত্যিই অদৃশ্য এবং অবাধ্য। প্রাচীনকাল থেকেই প্রেমের কাছে কোনো বাধা বা বাধা হতে পারে না, এমন বিশ্বাস বহু মানুষে ধারণ করে এসেছেন। একে অপরকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়। আর সেই প্রেম যদি দু’টি দেশের মধ্যে হয়, তবে তা আরও জটিল হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনই এক ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়, যেখানে কলকাতা হাইকোর্টের (high court)নির্দেশে দুই বছর পর প্রেমিকার আমেরিকা যাত্রার অনুমতি মিলল। প্রেমিক আমেরিকায় এবং প্রেমিকা ভারতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই জুটির আশা পূর্ণ হয়েছে, আদালতের নির্দেশে এবার তারা একে অপরের পাশে থাকতে পারবে।
প্রেমিকার কাছে পৌঁছানোর স্বপ্নে বাঁধা, তবে হাইকোর্টে জয়
এটা এমন একটি গল্প, যা অনেকের হৃদয়ে অল্প হলেও স্পর্শ করবে। বিহারের ভাগলপুরের এক যুবক এবং ভারতের একটি শহরের একটি তরুণী দুই বছর ধরে একে অপরকে ভালোবাসতেন। প্রেমের সম্পর্কটি এতই গভীর ছিল যে, তারা একে অপরের পাশে থাকতে চাইছিলেন। প্রেমের সম্পর্ক পরিণতির দিকে এগিয়ে ছিল, এবং তারা বাগদানও সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু প্রেমিকা যখন বাগদত্তার কাছে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তখন এক অপ্রত্যাশিত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তবে, সমস্যা ছিল শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি ছিল আইনি। ২০২৩ সালে এক পুরোনো মামলার কারণে প্রেমিকার বিদেশযাত্রা আটকে যায়। বেনিয়াপুকুর থানায় একটি চুরি এবং মারধরের অভিযোগে নাম ওঠে প্রেমিকার। সেই মামলার বিচার শুরু হয়নি, কিন্তু মামলা চলমান থাকার কারণে তার পাসপোর্ট এবং ভিসার প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছিল। প্রেমিকার দাবি ছিল, তাঁকে আমেরিকা যেতে না দিতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, এবং এই মামলা তার বিদেশযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ: বিচারাধীন মামলায় পাসপোর্ট আটকে রাখা যাবে না
এই পুরো বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে(high court) পৌঁছালে, বিচারপতি অমৃতা সিনহা মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তিনি এই বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘বিচারাধীন মামলার কারণে দীর্ঘদিন কোনও নাগরিকের পাসপোর্ট বা ভিসা আটকে রাখা যাবে না। পাসপোর্ট বিদেশে যাওয়ার জন্য, যাত্রা আটকানোর জন্য নয়।’ অর্থাৎ, শুধু একটি বিচারাধীন মামলার কারণে, একজন নাগরিকের বিদেশ যাত্রায় বাধা দেওয়া উচিত নয়। বিচারপতি সিনহা আরও বলেন, “যদি কোনও মামলার কারণে পাসপোর্ট আটকে রাখা যায়, তবে এটি সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে।”
এই পর্যবেক্ষণের পর, প্রেমিকার আইনজীবী সারওয়ার জাহান আদালতে তার যুক্তি পেশ করেন, “এটি শুধুমাত্র একটি প্রেমের বাধা। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষই আসলে এই রকম দুষ্টু কাজ করছে, যারা প্রেমে বাধা সৃষ্টি করছে।” এর প্রতিক্রিয়ায়, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, “ফৌজদারি বিচারাধীন মামলার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স না পেলে, পাসপোর্ট বা ভিসা দেওয়া সম্ভব নয়।”
আইনজীবীদের তর্ক-বিতর্ক এবং বিচারপতির মন্তব্য
এমন তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকলেও, বিচারপতি সিনহা অত্যন্ত শান্ত ও বিচক্ষণভাবে সিদ্ধান্ত নেন। আদালত মন্তব্য করেন, “যদি রাজনীতিবিদদের পাসপোর্ট বাতিল করা যায়, তাহলে আসলেই অনেক বেশি রাজনীতিবিদদের পাসপোর্ট বাতিল হওয়া উচিত।” এই ধরনের মন্তব্য অবশ্য আদালতের কৌতুকপূর্ণ ছিল, তবে এর মধ্য দিয়ে বিচারপতি সিনহা একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন যে, আইন বা আইনি প্রক্রিয়া কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।
এটি ছিল প্রেমিকার জন্য এক বিশাল সাফল্য। কলকাতা হাইকোর্টের (high court)নির্দেশে, প্রেমিকার আমেরিকায় যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হলো এবং তার কাছে পৌঁছানোর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।
প্রেমের জয়, আর কোনো বাধা রইল না
প্রেমিকা আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, “হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে আমি সত্যিই খুব খুশি। এটি আমার জন্য এক বিশাল সাফল্য। আমেরিকায় রাত ছিল যখন আমি এই সুখবর পেয়েছি, কিন্তু সকালে আমি ওই সুখবর জানাবো। বিচারপতি অমৃতা সিনহা ম্যাডামের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হলো, আর এখন আমি আমার বাগদত্তার কাছে পৌঁছাতে পারব।”
শেষে জয় হলো প্রেমের, দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল মিলল
হাইকোর্টের (high court)নির্দেশে, প্রেমিকা এখন শীঘ্রই আমেরিকায় পৌঁছাতে পারবেন। দু’টি দেশের মধ্যে বিরাট দূরত্ব সত্ত্বেও, দীর্ঘ অপেক্ষা এবং আইনি বাধাগুলোর পর, প্রেমের জয় হলো। তারা একে অপরের পাশে থাকতে পারবে, আর একে অপরের সঙ্গে তাদের জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু করবে।
এই ঘটনা যেন একটি প্রমাণ, যে সত্যিকার প্রেমের সামনে কোনো বাধাই দাঁড়াতে পারে না, এবং আইনের সুবিচারের মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকার এই মিলন বাস্তবে রূপ নেবে।