স্ত্রীর ‘অত্যাচারে’ যুবকের আত্মহত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নয়া নির্দেশ

বেঙ্গালুরুর এক প্রযুক্তি কর্মী, অতুল সুবাশ, যিনি সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম(Supreme Court) কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা…

Supreme Court Rules Wife Can Claim Maintenance from Husband Even Without Living Together

বেঙ্গালুরুর এক প্রযুক্তি কর্মী, অতুল সুবাশ, যিনি সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম(Supreme Court) কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। প্রযুক্তি কর্মী অতুল সুবাশের আত্মহত্যার মামলা সম্প্রতি সংবাদে ব্যাপক চর্চিত হয়েছে, যেখানে তিনি তার স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ (Supreme Court)তুলেছেন। এ ঘটনায়(Supreme Court) কেবল তার জীবনহানিই ঘটেনি, বরং এটি আরো একটি আইনগত এবং সমাজিক বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে।

সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court), যা বর্তমানে এই ধরনের মামলার দিকে নজর দিচ্ছে, সম্প্রতি এক বিবৃতিতে অ্যালিমনি বা স্থায়ী ভরণপোষণ নির্ধারণের জন্য যে মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে তা স্পষ্ট করেছে। আদালত বলেছে, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তবে এটি কোনো কঠোর নিয়মাবলী বা “স্ট্রেইট জ্যাকেট ফর্মুলা” নয়।

   

গতদিন সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেয়, যা প্রাভিন কুমার জৈন এবং অঞ্জু জৈনের বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় একটি রায় দেয়। এই মামলায়, আদালত প্রাভিন কুমার জৈনকে তার স্ত্রীর জন্য ₹৫ কোটি অ্যালিমনি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই মামলাটি উত্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে কিছু বছরের সম্পর্কের পর অবশেষে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আদালত তার রায়ে বলে যে, সঠিক অ্যালিমনি নির্ধারণের জন্য কিছু বিশেষ উপাদানগুলো বিবেচনায় নিতে হবে, যেগুলোকে প্রতিটি মামলায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এই রায়টি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট এক বিস্তৃত তালিকা দিয়েছে, যা অ্যালিমনি নির্ধারণে অনুসরণযোগ্য মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ৮টি মূলনীতি হলো:

১. স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্ত্রীর ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভবিষ্যতে স্ত্রী এবং সন্তানদের মৌলিক প্রয়োজন: স্ত্রীর এবং সন্তানদের জীবনযাত্রার মান এবং প্রয়োজনীয়তা বিচার করা হবে।
৩. উভয় পক্ষের যোগ্যতা ও কর্মসংস্থান: স্ত্রী ও স্বামীর পেশাগত দক্ষতা এবং আয়কাঠামোও হিসাব করা হবে।
৪. আয়ের উৎস ও সম্পদ: উভয় পক্ষের আয়ের উৎস এবং সম্পদকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
৫. স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে কতটা মানের জীবনযাপন করেছিলেন: স্ত্রীর শ্বশুরবাড়িতে থাকার সময় জীবনযাত্রার মানও একধরনের প্যারামিটার হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. স্ত্রী কি পরিবারের দেখাশোনার জন্য তার চাকরি ছেড়েছিলেন?: স্ত্রীর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, পরিবার দেখাশোনা করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
৭. যদি স্ত্রী কর্মরত না হন, তবে তার আইনি লড়াইয়ের জন্য এক разум পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন: স্ত্রীর পক্ষ থেকে আইনি লড়াই করার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।
৮. স্বামী তার আয় এবং অন্যান্য দায়িত্বের সাথে কতটা সামঞ্জস্য রেখে Maintenance প্রদান করতে পারবেন?: স্বামীর বর্তমান আর্থিক অবস্থা এবং তার অতিরিক্ত দায়িত্বও দেখা হবে।

এই মামলার বিবরণে, আদালত প্রাধান্য দিয়েছে যে, প্রতিটি মামলা আলাদা, এবং এসব পরামর্শ একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু এগুলো কোনো কঠোর নিয়ম হিসেবে বিবেচিত হবে না। এই নির্দেশনাগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন নির্দিষ্ট ধারা অথবা মডেলকে ফলো করার মধ্যে কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

তবে, আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রাভিন কুমার জৈন তার স্ত্রীর জন্য ₹৫ কোটি অ্যালিমনি প্রদান করবেন, যাতে তার স্ত্রীর ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি, আদালত বলেছেন যে, প্রাভিনের পুত্রের জন্য ₹১ কোটি প্রদান করা হবে, যাতে তার পুত্রের ভবিষ্যতেও কোনো সমস্যা না হয়।

এদিকে, বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তি কর্মী অতুল সুবাশের আত্মহত্যা মামলাটি অনেকটা আলোচনায় উঠে এসেছে, যেখানে তিনি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। অতুল সুবাশের আত্মহত্যার পর, তিনি ২৪ পৃষ্ঠার একটি চিঠি রেখে গিয়েছিলেন, যেখানে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মতে, স্ত্রীর একাধিক মিথ্যা মামলা, এবং অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের অভিযোগ তার মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

এই ঘটনাটি সমাজে আইনগত ক্ষেত্রে নারীর অধিকার, অ্যালিমনি, এবং পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টিকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।