পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানালেন শুভেন্দু অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা (Rohingya) মুসলিমদের উপস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, রাজ্যে প্রায় ১ কোটি…

Suvendu Adhikari Claims 1 Crore Rohingya in West Bengal

পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা (Rohingya) মুসলিমদের উপস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, রাজ্যে প্রায় ১ কোটি রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ভোট ব্যাংক” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবং প্রশাসন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে এনে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক।

শুভেন্দুর অভিযোগ
শুভেন্দু অধিকারী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১ কোটি রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্ক। এই রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ অসামাজিক এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাদের মদত দিচ্ছে। রাজ্য পুলিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আনা হচ্ছে এবং তাদের সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

   

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই কারণে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৭২টি স্থানে জমি পাচ্ছে না। এই সরকার মুসলিম তোষণের রাজনীতি করছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।” শুভেন্দু আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই তোষণ নীতির মুখ হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী কাজ করছেন।

রোহিঙ্গা (Rohingya) সমস্যা এবং দেশের নিরাপত্তা
রোহিঙ্গা মুসলিমরা মূলত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু অনেকেই অবৈধভাবে ভারতসহ অন্যান্য দেশে প্রবেশ করছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করছে।

শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এই অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, রাজ্য সরকার কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য। তিনি আরও জানান, বিএসএফ-এর কাজকর্মে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা ও প্রতিবাদ
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগগুলি সরাসরি অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ।” তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে আশ্রয় দেওয়া হয়নি।

তবে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি জটিল হয়ে উঠেছে। বিজেপি এবং তৃণমূল একে অপরকে দোষারোপ করছে। বিজেপি মনে করে, তৃণমূল সরকারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতির কারণে দেশের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূল দাবি করছে যে, বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য এ ধরনের অভিযোগ করছে।

জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ
রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের ফলে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি আরও জোরালো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণও এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মত পোষণ করছে। কিছু মানুষ শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। আবার, তৃণমূল সমর্থকরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

বিএসএফ এবং সীমান্ত সুরক্ষা
বিএসএফ দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য কাজ করছে। তবে, শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্য সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে বিএসএফ তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারছে না। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।”

রোহিঙ্গা ইস্যু এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক জ্বলন্ত বিতর্ক। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ এবং তৃণমূলের পাল্টা প্রতিক্রিয়া রাজ্য এবং দেশব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, এই ইস্যু দেশের নিরাপত্তা এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, এবং মমতা সরকারের ভূমিকা নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আরও বিতর্ক হতে পারে।

BJP leader Suvendu Adhikari claims that nearly 1 crore Rohingya Muslims are residing in West Bengal, accusing Mamata Banerjee’s government of facilitating their spread. He raises concerns about national security and calls out the government’s alleged appeasement policies.