ছত্তীসগঢ়ের (Chattisgarh) বস্তার ডিভিশনের বিজাপুর জেলায় আরও একবার মাওবাদী (Maoist) গেরিলা বাহিনীর নৃশংস হামলার সাক্ষী হলো। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফরসেগঢ় থানার অন্তর্গত সোমনপল্লী গ্রামে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর মাওবাদীরা কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি ছড়িয়ে লিফলেটও বিতরণ করেছে। এটি আবারও প্রমাণ করল যে, মাওবাদী গেরিলারা কোনভাবেই তাদের চরমপন্থী কার্যক্রম থেকে পিছু হটছে না।
এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী কুদিয়াম মাঢ়ো, যিনি বিজেপির (BJP)জেলা কৃষক সংগঠনের সহ-সভাপতি ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাঢ়ো একজন জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত নেতা ছিলেন এবং তার খুনের পর মাওবাদীরা লিফলেটের মাধ্যমে দাবি করেছে যে, তিনি পুলিশের চর ছিলেন, আর তাই এই শাস্তি। মাওবাদীরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করতে এবং সরকারী বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মাওবাদী গেরিলারা সাধারণত তাদের মতাদর্শের প্রচার করতে এবং সরকারি বাহিনী ও পুলিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকে। তাদের লক্ষ্য থাকে জনজাতি, আদিবাসী জনগণের কাছে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা এবং সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি করা। কুদিয়াম মাঢ়োর হত্যার পর ছড়ানো লিফলেটও এটাই প্রমাণ করে যে, মাওবাদীরা তাদের নিজেদের শাস্তি এবং বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার পর, বিজেপি এবং পুলিশ প্রশাসন গোটা অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিজেপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে, মাওবাদী গেরিলাদের আক্রমণের ফলে তাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে। একদিকে, পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছে, অন্যদিকে, তারা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
এই হামলা ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী আন্দোলনের নতুন মাত্রা প্রকাশ করছে, যেখানে তারা শুধু বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে না, বরং সাধারণ নাগরিকদেরও ভয়-ভীতি দেখাতে সক্ষম হচ্ছে। মাওবাদীদের কর্মকাণ্ডে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে, এবং তারা নিজেদের প্রতিরোধের আন্দোলনকে তীব্রতর করছে।
বিভিন্ন স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাওবাদী গেরিলারা এখন আরও বেশি সংগঠিত হয়ে উঠছে, এবং তারা বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করছে। এমনকি তারা স্থানীয় জনগণের মধ্যে সমর্থন পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এর পাশাপাশি, তারা সরকারি বাহিনী এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, স্থানীয় প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র সন্ত্রাস দমন নয়, এই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য সরকারের উচিত হবে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করা এবং পুলিশের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।
মাওবাদী হামলা এবং তার পরবর্তী প্রভাবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, সরকার ও জনগণকে আরও সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন সহিংস ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।