রাজ্যের সরকারি কর্মীদের (Government employees) মধ্যে বৈষম্য (Inequality) একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা শুধুমাত্র প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা নয়, বরং সরকারের কর্মী নীতির ক্ষেত্রে নানা ঘাটতি ও অদক্ষতার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষত, সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়ের কর্মীরা অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ–সুবিধা পেয়ে আসছেন, এবং এই বৈষম্যের ফলে সরকারি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর যেমন, ডিরেক্টরেট ও রিজিওনাল অফিস, সেখানকার কর্মীরা পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যার ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে।
এই বৈষম্য নিয়ে যখন একাধিক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার একটি হাইপাওয়ার্ড কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কমিটির মাধ্যমে সরকারি কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা রাজ্য প্রশাসনে একটি বড়ো পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।
কমিটির উদ্দেশ্য এবং প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত হাইপাওয়ার্ড কমিটি রাজ্যের সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করবে। কমিটি তার প্রথম বৈঠক (meeting) আগামী বৃহস্পতিবার (thursday) নবান্নে (Nabanna) করবে। এই বৈঠকে সরকার কীভাবে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি, সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে বৈষম্য দূর করবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। একে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারণ প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা এবং সুযোগ–সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে, যা কর্মীদের কর্মদক্ষতা এবং সরকারের প্রতি আনুগত্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কমিটি বিশেষভাবে সেক্রেটারিয়েট, ডিরেক্টরেট, এবং রিজিওনাল অফিসের কর্মীদের মধ্যে সমান সুযোগ এবং উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি করার দিকে নজর দেবে। সেক্রেটারিয়েটের কর্মীরা অত্যধিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কারণে অন্য দপ্তরের কর্মীরা এগিয়ে যেতে পারেন না, যদিও তাদের দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান। কমিটি এই বৈষম্য দূর করে কর্মীদের মধ্যে সুবিচারের প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়েছে।
কর্মীদের প্রতিক্রিয়া:
এ বিষয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেক্রেটারিয়েট এবং ডিরেক্টরেট ও রিজিওনাল অফিসের কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। আমরা খুশি যে, সরকার অবশেষে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’’
এছাড়াও, রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে সুবিচার এবং স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তারা আশা করছেন যে, এই কমিটি বৈষম্য দূর করার জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করবে, যাতে সমস্ত বিভাগের কর্মীরা সমানভাবে সুযোগ–সুবিধা এবং পদোন্নতির সুযোগ পান।
রাজ্য প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজন:
রাজ্য প্রশাসনে দীর্ঘকাল ধরে যে বৈষম্য চলছিল, তা যে শুধুমাত্র কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সরকারি কার্যক্রমের গতিশীলতা এবং জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সমতা এবং সুবিচারের অভাব প্রশাসনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং এটি সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মনে করেন, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পদোন্নতি কৌশল প্রণয়ন করা গেলে, তা প্রশাসনিক দক্ষতা এবং কর্মীদের মধ্যে উদ্বুদ্ধতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। একদিকে, সেক্রেটারিয়েটের কর্মীরা পদোন্নতি এবং সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান, অন্যদিকে ডিরেক্টরেট বা রিজিওনাল অফিসের কর্মীরা পিছিয়ে থাকেন, এমন পরিস্থিতি দূর করা গেলে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা:
রাজ্য সরকার এই বৈষম্য দূর করতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। হাইপাওয়ার্ড কমিটি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খসড়া তৈরি করতে কাজ শুরু করেছে, যা পরবর্তীতে সরকারের সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরী হবে। এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে, কতটা দক্ষতার সঙ্গে বৈষম্য দূর করা যায় এবং সরকারের কর্মী নীতির মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
এখন দেখার বিষয় হবে, এই বৈঠক এবং গঠিত কমিটি কি বাস্তবে সরকারী কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সফল হবে। তবে সরকারি কর্মীদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হলে, তা রাজ্যের প্রশাসনিক সংস্কারের এক বড়ো পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে।