গেরুয়া রাজ্যগুলিতে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে দেশজুড়ে মোট ১১.৭০ লক্ষ স্কুলছুট শিশু চিহ্নিত হয়েছে। এই তথ্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি…

More than 11.70 lakh children are identified as out-of-school in India in 2024-25

short-samachar

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে দেশজুড়ে মোট ১১.৭০ লক্ষ স্কুলছুট শিশু চিহ্নিত হয়েছে। এই তথ্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ গেরুয়া শাসিত রাজ্যগুলিতে এই প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ একাই দখল করেছে দেশের মোট স্কুলছুট শিশুর ৬০%।

   

শীর্ষ তিন রাজ্য
১. উত্তরপ্রদেশ: ৭.৮৪ লক্ষ
২. ঝাড়খণ্ড: ৬৫ হাজার
৩. অসম: ৬৩ হাজার

উত্তরপ্রদেশ: শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা
উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৮ লক্ষ শিশু স্কুলছুট হওয়ার পরিসংখ্যান শুধু আতঙ্কজনক নয়, বরং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অজ্ঞতা, এবং স্কুলে শিক্ষার নিম্নমান এই সমস্যার মূল কারণ। এছাড়াও, সরকারি উদ্যোগের অভাব এবং শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় উৎসাহিত করার প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

একজন সমাজকর্মী রমেশ ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, “সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকসংখ্যা কম, স্কুলের পরিকাঠামো অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে, গ্রামের শিশুরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তদ্ব্যতীত, শ্রমিক শিশুদের সংখ্যা উত্তরপ্রদেশে ভয়ানকভাবে বেড়ে চলেছে।”

ঝাড়খণ্ড ও অসম: অভিন্ন চ্যালেঞ্জ
ঝাড়খণ্ড ও অসম, এই দুই রাজ্যেও স্কুলছুটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রকট। সেখানে যোগাযোগব্যবস্থার অভাব এবং স্কুলের স্বল্পতা সমস্যাটিকে তীব্র করেছে।

অসমে আবার ভাষাগত সমস্যা এবং বন্যার কারণে স্কুলগুলো প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয়দের মতে, স্কুলছুট শিশুদের একটি বড় অংশ চা-বাগান কর্মীদের সন্তান, যাদের জন্য শিক্ষা একটি অগ্রাধিকারের বিষয় নয়।

গেরুয়া শাসিত রাজ্যে কেন এমন অবস্থা?
গেরুয়া রাজ্যগুলিতে স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না হওয়া এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবই এই সমস্যার মূলে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যগুলির সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি শুধু বৃহৎ পরিকাঠামো প্রকল্প এবং ধর্মীয় বিষয়কেন্দ্রিক। কিন্তু শিক্ষা, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে, তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।

কেন্দ্র ও রাজ্যের দায়িত্ব
কেন্দ্রীয় সরকারের “সমগ্র শিক্ষা” প্রকল্প এবং “স্কুল চলো অভিযান” জাতীয় স্তরে স্কুলছুট কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে রাজ্যস্তরে প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়নের অভাব বারবার এই উদ্যোগগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, স্কুলছুট শিশুদের পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনতে উত্তরপ্রদেশের মাত্র ৩৫% শিশু নাম নথিভুক্ত করেছে। এই পরিসংখ্যান আশঙ্কাজনক।

একজন শিক্ষক অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং উৎসাহ বৃদ্ধিতে কাজ করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বই বিতরণ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।”

সমাধান কী হতে পারে?
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য সচেতনতা কর্মসূচি চালানো প্রয়োজন।
২. স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন: প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্মত স্কুল গড়ে তোলা ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ।
৩. বাল্যবিবাহ ও শিশু শ্রম রোধ: দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আইন প্রয়োগ করে শিশুদের শিক্ষায় বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৪. প্রযুক্তি ব্যবহার: অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে শিক্ষার সুযোগ সহজলভ্য করা।

স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রবণতা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশুভ সংকেত। যদি অবিলম্বে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একযোগে কাজ না করে, তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। শিক্ষা শুধু একটি অধিকার নয়, এটি জাতীয় উন্নয়নের মেরুদণ্ড। সেই আলো পৌঁছানো উচিত প্রতিটি শিশুর কাছে।

More than 11.70 lakh children are identified as out-of-school in India in 2024-25, with Uttar Pradesh accounting for 60%. Explore the alarming trends and challenges in the education system.