বাংলাদেশ ইস্যুতে বামেদের কটাক্ষ তথাগত রায়ের

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস অত্যাচারের প্রসঙ্গে একটি টুইট করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায় (Tathagata Roy)। নিজের…

Tathagata Roy

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস অত্যাচারের প্রসঙ্গে একটি টুইট করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায় (Tathagata Roy)। নিজের সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে বামপন্থী দল এবং কিছু বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর ঘটে চলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাই মুখ খুললেও, বামপন্থী রাজনৈতিক নেতারা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা সম্পূর্ণ নীরব।

তথাগতর বিস্ফোরক মন্তব্য
তথাগত রায় তাঁর টুইটে সরাসরি বলেন, “বাংলাদেশে নৃশংস হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সবাই, মায় ‘দুধেল গাই’ দের মালকিন মমতাও। শুধু খোলে নি বিমানদা সেলিম শতরূপ মীনাক্ষী দীপঙ্কর গোত্রের বাঙালি বামপন্থীরা। আর খোলে নি তাদের পোঁ ধরা শ্রীজাত অপর্ণা কৌশিক গোত্রের দুর্বুদ্ধিজীবীরা।”

   

তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তথাগত রায় বামপন্থীদের বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে নীরব থাকার জন্য দায়ী করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, মুসলমানদের নিয়ে বামপন্থীদের এই “আহ্লাদ” বোধগম্য নয়।

বামপন্থীদের সমালোচনা
তথাগত রায়ের মতে, বাঙালি বামপন্থীরা এক ধরনের আদর্শগত প্রীতি দেখানোর জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু বাস্তবে, মুসলমানরা ক্ষমতায় এলে বামপন্থীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে বলেও তাঁর অভিমত। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে বামপন্থীদের অবস্থা প্রায় বিলীন হয়ে গেছে, তা থেকে শিক্ষণীয় হতে পারত পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা।

বুদ্ধিজীবীদের দিকেও আঙুল
তথাগত রায়ের সমালোচনা শুধু রাজনৈতিক মহলেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বুদ্ধিজীবীদেরও কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর টুইটে শ্রীজাত, অপর্ণা সেন এবং কৌশিক সেনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের ‘দুর্বুদ্ধিজীবী’ আখ্যা দিয়েছেন। তথাগত রায়ের মতে, এই ব্যক্তিরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন এবং হিন্দু নির্যাতনের মতো বিষয়ে নীরব থাকেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
তথাগত রায়ের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বামপন্থীরা এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে সাধারণ বুদ্ধিজীবী মহলে এটি একটি বিতর্কিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বামপন্থীদের দাবি, তাঁরা সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি সমান সহানুভূতিশীল। তথাগত রায়ের অভিযোগ তাঁদের কাছে পক্ষপাতমূলক এবং রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার একটি প্রচেষ্টা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টেনে আক্রমণ
তথাগত রায়ের টুইটে উল্লেখ রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, যদিও তথাগত এটিকে যথাযথ মনে করেননি। তিনি বামপন্থীদের এই ইস্যুতে একেবারে নীরব থাকা এবং তাঁদের “আহ্লাদ”-কে তুলোধোনা করেছেন।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও ভবিষ্যতের প্রভাব
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের খবর বারবার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এটি যে শুধু মানবাধিকার ইস্যু নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, তা আবারও স্পষ্ট হলো তথাগত রায়ের এই মন্তব্যের মাধ্যমে।

তবে এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নতুন কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে রাজনৈতিক তরজা একটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথাগত রায়ের মন্তব্য শুধুমাত্র এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিল।

তথাগত রায়ের টুইট পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর এই বক্তব্য সমর্থকদের মধ্যে যেমন সমর্থন পেয়েছে, তেমনই সমালোচকদের কাছে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তবে এই ঘটনায় স্পষ্ট, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সমস্যা নয়, বরং ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।