বাংলার (Bengal) বিজেপির (BJP) সদস্য সংগ্রহ অভিযান এখন একটি সংকটের মধ্যে পড়েছে, এবং পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ানো হলেও, এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, যা প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেকটাই কম। রাজ্য বিজেপির নেতারা বারবার দাবি করেছেন, সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন, এবং সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সময় বাড়িয়েছে। প্রথমে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল, তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় তা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু, সময় বাড়ানোর পরেও সদস্য সংগ্রহের কাজ তেমন গতিশীল হয়নি, যা দলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সংকট মোকাবিলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল (Sunil Bansal) রাজ্যের সাংসদদের (MPs) সঙ্গে বৈঠক (Meeting) করতে যাচ্ছেন। দিল্লিতে (delhi) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিনি সাংসদদের আরও তৎপর হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট বার্তা দেবেন। রাজ্যে বিজেপির মোট ১৪ জন সাংসদ রয়েছেন—১২ জন লোকসভার সাংসদ এবং ২ জন রাজ্যসভার সাংসদ। বনসলের উদ্দেশ্য হল, সাংসদদের মধ্যে আরও বেশি উৎসাহ এবং দায়িত্ববোধ সঞ্চারিত করা, যাতে তারা আরও সক্রিয়ভাবে সদস্য সংগ্রহের কাজে অংশ নেন। সাংসদদের অব্যাহত অনাগ্রহ এবং নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা এই পরিস্থিতিকে একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয় বলে মনে করছেন।
এছাড়া, বনসল রাজ্য নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি দলীয় বৈঠকে তিনি রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিজেপির সদস্য সংগ্রহের কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দুর্বলতা স্পষ্ট, এবং তার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ বনসলের এই বক্তব্যে দলের নেতারা যথেষ্ট অবাক হলেও, পরবর্তী সময়ে সাংসদদের এবং দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আরও জোরালো কাজ করার চাপ আসতে পারে।
রাজ্য বিজেপি মনে করছে, সদস্য সংগ্রহের প্রচারে আরও বেশি জনসংযোগ এবং প্রচারমূলক কার্যক্রমের প্রয়োজন। দলীয় সাংসদরা যদি এলাকায় গিয়ে আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে যুক্ত হন, তবে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলাতে পারে। তবে দলের মধ্যে কিছু নেতার মত, সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না, যা বিজেপির রাজ্য শাখার জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন যে, এর ফলস্বরূপ আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক শক্তি কমে যাবে এবং ভোটের পরবর্তী সম্ভাবনা ক্ষুণ্ণ হবে।
রাজ্য বিজেপির নেতারা অবশ্য আশা করছেন যে, বনসলের তৎপরতা এবং সাংসদদের উদ্যোগে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্য নেতাদের অবস্থা এখন অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা একমাত্র সাংসদরা তাদের দায়িত্ব পালন করলে কাটিয়ে উঠতে পারবে। সেক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।
বিজেপির কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে কি না। দলের সাংগঠনিক কর্মীরা এখনও আশাবাদী, তবে যদি এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বিজেপির জন্য এটি বড় এক বিপর্যয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর ফলে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুহূর্ত, যা আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।