বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ পোশাক শিল্প (Garment Industry) বর্তমানে গভীর সংকটের মুখে। একসময় এই শিল্প দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫% যোগান দিত। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে ভারতের দিকে ঝুঁকছে বহুজাতিক এবং স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলি। এর ফলে ভারতের সুরাট, তামিলনাড়ু, নয়ডা এবং পাঞ্জাবের মতো অঞ্চলগুলো বড় ধরনের উপকার পাচ্ছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সংকট
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এই ধসের মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ। বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর চাপ এবং জ্বালানি সংকট উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এছাড়াও কারখানা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এবং পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থতা ক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাঁটল, ফলে ভারত থেকে কাঁচামালও বাংলাদেশে যাচ্ছে না৷
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, বেশ কিছু বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড যেমন এইচঅ্যান্ডএম, জারা এবং নাইক বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতের কারখানাগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এমনকি, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
ভারতের দখল বৃদ্ধি
বাংলাদেশের বিপরীতে ভারতের পোশাক শিল্প ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমিকবাহিনী আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।
- সুরাট: গুণগত মানের কাপড় এবং সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরবরাহের জন্য বিখ্যাত।
- তামিলনাড়ু: দেশের অন্যতম বৃহৎ গার্মেন্ট হাব, যেখানে টেক্সটাইল উৎপাদনে ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে।
- নয়ডা: দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উন্নত লজিস্টিক পরিষেবা দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে।
- পাঞ্জাব: তুলা এবং সুতার উৎপাদনে ভারতীয় বাজারে অগ্রণী অবস্থানে।
বাংলাদেশের করণীয়
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছানোর জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং কারখানার আধুনিকীকরণ অপরিহার্য। তাছাড়া, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দ্রুত সরবরাহ এবং উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংকট দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বাংলাদেশের জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করবে। তবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ালে বাংলাদেশ আবারও আন্তর্জাতিক বাজারে তার শক্ত অবস্থান ফিরে পেতে পারে।