বাংলাদেশিদের লিলিপুট বলে কটাক্ষ দেবাংশুর

বাংলাদেশি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র উত্তাপ। এই প্রেক্ষিতেই এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu…

Debangshu Bhattacharya Calls Bangladeshi Threats ‘Lilliputian’; Sparks Debate

short-samachar

বাংলাদেশি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র উত্তাপ। এই প্রেক্ষিতেই এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya )। নিজের ফেসবুক পেজে একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা পোস্ট করে তিনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

   

দেবাংশুর কবিতায় রয়েছে একের পর এক তীব্র কটাক্ষ। কবিতার শুরুতেই তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেছেন:

“ভ্যাড়ায় চড়ে, পটকা নিয়ে
ভীষণ হবে ফাইট!
কন্ঠ ছেড়ে করছে বড়াই
পাকিস্তানি লাইট..”
কটাক্ষ ও লিলিপুট প্রসঙ্গ

দেবাংশু কবিতার মাধ্যমে স্পষ্টই বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের সেনাকর্মীদের হুমকি বাস্তবসম্মত নয় এবং এটি কেবলমাত্র বড়াই। তিনি বলেন:

“ঢাকা থেকে আসতে গেলে
কোনটা বলো রুট?
কলকাতাকে করবে দখল
সকল লিলিপুট!”

লিলিপুট শব্দ ব্যবহার করে দেবাংশু যেন আরও একধাপ এগিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, এই ধরনের হুমকি আসলে ‘অসম্ভব কল্পনা’ ছাড়া কিছুই নয়।

কেন এমন প্রতিক্রিয়া?
সম্প্রতি বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত কিছু সেনাকর্মী একটি ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করেছিলেন যে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং ভারতের কলকাতা, আসাম ও দিল্লি দখল করতে সক্ষম। এই বক্তব্য ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই মন্তব্যকে উসকানিমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন। দেবাংশুর প্রতিক্রিয়াও সেই আবহে এসেছে।

নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া
দেবাংশুর এই কবিতা পোস্ট করার পর থেকেই তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ তাঁর কটাক্ষকে সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ এর বিরোধিতা করেছেন। সমর্থকদের মতে, দেবাংশু এই ব্যঙ্গাত্মক কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের হুমকির অসারতাকে তুলে ধরেছেন। তবে, বিরোধীদের দাবি, এই ধরনের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্ক আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে পারে।

বিরোধী শিবিরের প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দেবাংশুর কবিতাকে ‘উসকানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। এই ধরনের মন্তব্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। তৃণমূল কংগ্রেসের উচিত তাদের নেতাদের এই ধরনের উক্তি থেকে বিরত রাখা।”

দেবাংশুর সাফাই
তবে দেবাংশু ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে অটল। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর কবিতা ব্যঙ্গাত্মক হলেও এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সেনাকর্মীদের অযৌক্তিক দাবি ও বড়াইকে প্রতিহত করা। তিনি আরও বলেন, “যে দেশ আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, তাদের থেকে এই ধরনের হুমকি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার কবিতা কোনো সম্প্রদায় বা জাতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়নি।”

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটি সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার এবং ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। দেবাংশুর এই মন্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভবিষ্যৎ কী?
দুই দেশের শাসক শ্রেণি এই ধরনের মন্তব্য এবং বিতর্কের থেকে বিরত থাকতে চায়। তবে নেটমাধ্যমে দেবাংশুর এই ব্যঙ্গাত্মক কবিতা যে বেশ কিছুদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।

দেবাংশুর কবিতা একদিকে যেমন একটি মজার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, তেমনই তা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আলোচনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক কীভাবে সমাধান করা হয় এবং দুই দেশের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।