রাজ্য পরিবহণ (Transport) দপ্তর সম্প্রতি একটি ৬ পাতার নির্দেশিকা (Guidelines) জারি করেছে, যার মাধ্যমে বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীদের (passengers) সুবিধার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশিকাটি বাসের নিরাপত্তা এবং সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, যাত্রীদের দীর্ঘদিনের একটি দাবী—বাসে ভাড়ার (Fare) তালিকা টাঙানো—এই নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন (questions) উঠছে।
নতুন নির্দেশিকায় কী কী পরিবর্তন এসেছে?
পরিবহণ দপ্তরের নতুন নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিটি বাসে রুট–চার্ট এবং টাইম টেবিল টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে যাত্রীরা সহজেই জানতে পারেন কোন রুটে বাস চলছে এবং তার নির্ধারিত সময়সূচি কী। পাশাপাশি, প্রতিটি বাসে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং কন্ডাক্টরের লাইসেন্সের ল্যামিনেটেড ফটোকপি টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে পরিবহণ দপ্তর যাত্রীদের জন্য বাসের গতি এবং নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে এক দুর্ঘটনায় এক খুদে ছাত্রের মৃত্যুর পর বাসের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর এই নির্দেশনার পরপরই পরিবহণ দপ্তর এই নির্দেশিকা জারি করেছে, যা বাস মালিকদের অবশ্যই পালন করতে হবে।
বাস ভাড়ার তালিকা কেন নেই?
তবে যাত্রীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবী—বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানো—এই নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, “কোভিডের আগে সব বাসে ভাড়ার তালিকা থাকত, কিন্তু এখন আর কোনো বাসে তা নেই।” তারা আরও বলেন, “এখন অনেক বাসে ভাড়া বেড়ে গেছে, কিন্তু সরকারের কোনও নির্ধারিত ভাড়া নেই। বাস মালিকরা নিজেদের মতো ভাড়া ঠিক করে নিয়েছেন, যার ফলে বাসের কন্ডাক্টরের কাছ থেকে কখনও ৭ টাকা, কখনও ১০ টাকা, আবার কখনও ১৫ টাকাও নেওয়া হচ্ছে।”
এ বিষয়ে পরিবহণ মন্ত্রী বলেছিলেন, “সরকার বাস ভাড়া বাড়ায়নি। যদি কোনো অভিযোগ আসে, তবে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।” তবে যাত্রীদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, কারণ তারা চাইছেন বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানো হোক, যাতে তারা জানতে পারেন কোথায় কী ভাড়া ঠিক করা হয়েছে।
নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
পরিবহণ দপ্তর জানিয়েছে, নতুন নির্দেশিকার মধ্যে বাসের গতি এবং অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা মনিটর করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। চালকরা কত দ্রুত বাস চালাচ্ছেন, কোথায় বাস দাঁড়াচ্ছে, কোথাও অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে বাস বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছে কিনা—এ সব কিছু লাইভ মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। এতে করে বাস মালিকরা এবং পরিবহণ দপ্তর সহজেই এই সমস্ত বিষয় ট্র্যাক করতে পারবেন।
এছাড়া, যাত্রীরা এখন থেকে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে বাসের অবস্থান জানতে পারবেন। এতে করে যাত্রীদের জন্য আরও সুবিধা হবে, কারণ তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর পূর্বে বাসের অবস্থান যাচাই করতে পারবেন।
চালকদের লাইসেন্স ও নিরাপত্তা বিধি:
পরিবহণ দপ্তর আরও জানিয়েছে, যদি কোনো চালক নিয়মিতভাবে আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে তার লাইসেন্স সাময়িকভাবে ব্লক করা হতে পারে। চালক নিয়োগের সময় বাস মালিকদের কাছে এই তথ্য থাকতে হবে—চালকের নামে কোনো মামলা রয়েছে কি না এবং সে কতবার নিয়ম ভেঙেছে।
এছাড়া, চালকদের মত্ত অবস্থায় বাস চালানো রোধ করতে ‘ব্রিদ অ্যানালাইজার’ (শ্বাস পরীক্ষক) ব্যবস্থার প্রবর্তনও করা হবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে চালকদের মত্ত অবস্থায় বাস চালানো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
মালিকদের জন্য নতুন পরামর্শ:
বাস মালিকদের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা চালক নিয়োগ করার আগে তার সঠিক তথ্য যাচাই করবেন। চালকের সঠিক লাইসেন্সের পাশাপাশি তার গাড়ির মেরামত ও নিয়মিত টেস্টিংও নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, মালিকদেরকে তাদের গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন ব্রেক সিস্টেম, আলো, সিট বেল্ট ইত্যাদি নিয়মিত চেক করতে হবে, যাতে যাত্রীদের কোনো ধরণের সমস্যা না হয়।
নতুন নির্দেশিকায় যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত:
পরিবহণ দপ্তরের এই নতুন নির্দেশিকার ফলে বাসের নিরাপত্তা এবং যাত্রীদের সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাস মালিকদের কাছে নিরাপত্তা ও গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে। তাছাড়া, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং লাইভ মনিটরিং সিস্টেম চালু হওয়ায় বাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুসংহত হবে।
তবে যাত্রীদের দাবি, বাসের ভাড়ার তালিকা টাঙানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আশা করা যাচ্ছে যে ভবিষ্যতে পরিবহণ দপ্তর এই বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।