বলিউডের “শোম্যান” নামে পরিচিত বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ ঘাই (Subhash Ghai) মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি নির্মাতা শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা এবং বারবার মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগছেন বলে জানা গিয়েছে। এই শারীরিক অসুস্থতার কারণে বুধবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসা এবং বর্তমান অবস্থা
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সুভাষ ঘাইয়ের শারীরিক অবস্থার উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, যার মধ্যে রয়েছেন নিউরোলজিস্ট ডাঃ বিজয় চৌহান, কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ নীতিন গোকহলে এবং পালমোনোলজিস্ট ডাঃ জালিল পারকার, তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত রয়েছেন।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ভর্তি হওয়ার পর থেকে সুভাষ ঘাইয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁর সুস্থতার বিষয়ে আশাবাদী। আগামী এক দিনের মধ্যেই তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হতে পারে।
সুভাষ ঘাইয়ের প্রাথমিক জীবন
সুভাষ ঘাই ১৯৪৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই গল্প বলার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। নাগপুরেই তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মাণে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্নে তিনি মুম্বাইতে আসেন এবং পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে (FTII) ভর্তি হন।
FTII-তে শিক্ষালাভের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রযুক্তিগত এবং সৃজনশীল দিকগুলি গভীরভাবে বোঝার সুযোগ পান। এখান থেকেই তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হয়। পড়াশোনা শেষ করার পর ঘাই চলচ্চিত্র জগতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিংবদন্তি নির্মাতা রাজ খোসলার সাথে কাজ করে তিনি এই শিল্পে প্রথম পা রাখেন।
পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ
সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “কালিচরণ” ছবির মাধ্যমে। শত্রুঘ্ন সিনহা অভিনীত এই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাড়া ফেলেছিল। এরপর ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তাঁর ছবি “বিশ্বনাথ”, যা তাঁকে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা দেয়। তবে ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “করজ” ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক, যা তাঁকে ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে।
বক্স অফিস সাফল্য এবং কালজয়ী ছবি
পরবর্তী দুই দশক জুড়ে সুভাষ ঘাই বলিউডকে একের পর এক ব্লকবাস্টার উপহার দিয়েছেন। তাঁর নির্মিত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- “হিরো” (১৯৮৩): একজন সাধারণ তরুণের যাত্রার গল্প, যা দারুণ সাড়া ফেলে।
- “করমা” (১৯৮৬): এক রোমাঞ্চকর দলগত অ্যাকশন ফিল্ম।
- “রাম লক্ষণ” (১৯৮৯): দুই ভাইয়ের শক্তিশালী গল্প।
- “পরদেশ” (১৯৯৭): ভারতীয় সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যা ছিল বছরের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি।
- “তাল” (১৯৯৯): এই ছবির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন এ.আর. রহমান। মিউজিক এবং গল্পের মিশ্রণে এটি দর্শকদের মন জয় করে।
সুভাষ ঘাইয়ের প্রভাব
সুভাষ ঘাইয়ের ছবিগুলি তাঁর নাটকীয় গল্প বলার ধরন, শক্তিশালী সংগীত এবং বড় পরিসরের সেট ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। তাঁর পরিচালিত বেশিরভাগ ছবি শুধুমাত্র ভারতে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বিপুল ব্যবসা করেছে। বলিউডে তাঁর নাম আজও সাফল্যের প্রতীক।
সাম্প্রতিক সময়ের উদ্বেগ
সুভাষ ঘাইয়ের এই শারীরিক অসুস্থতার খবর বলিউডে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। বলিউডের অনেক তারকা এবং ভক্তরা তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছেন।
সুভাষ ঘাই শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা নন; তিনি একজন গল্পকার, যিনি বলিউডকে একের পর এক মাস্টারপিস উপহার দিয়েছেন। তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সারা দেশ অপেক্ষা করছে।