পুরসভার নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে চলছে নিউমার্কেটে হকার রাজ

নিউ মার্কেট (New Market) কলকাতার  (Kolkata) একটি অত্যন্ত ব্যস্ত এবং ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক এলাকা, যেখানে প্রতি দিন হাজারো মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে…

New Market vendors

নিউ মার্কেট (New Market) কলকাতার  (Kolkata) একটি অত্যন্ত ব্যস্ত এবং ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক এলাকা, যেখানে প্রতি দিন হাজারো মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাতে হকারদের  (hawkers) দখলে রয়েছে, যা শহরের যানজট এবং পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। গত ২৫ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকের পর নিউ মার্কেট এলাকায় হকারদের দখল কমানোর জন্য পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে এক মাসের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও, গত অগস্ট থেকে ফের সেই সমস্যা ফিরে এসেছে। পুলিশের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও হকাররা ফুটপাতে ফিরে এসেছেন, যা নিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনার পর হকার নিয়ন্ত্রণ: শুরুর সাফল্য এবং পরে সমস্যা

   

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর নিউ মার্কেট এলাকায় হকারদের  (hawkers) দখল কমানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশ নিয়মিত অভিযানে নেমে ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে দেয় এবং কিছুদিনের জন্য নিউ মার্কেট এলাকায় হকারমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। প্রথম দিকে এটি সফলও হয়েছিল, কিন্তু পরে একই পরিস্থিতি ফিরে আসে। গত অগস্টে আবার হকাররা ফুটপাত এবং রাস্তায় ফিরে আসেন, যা পথচারীদের জন্য আরও একবার সমস্যা তৈরি করেছে।

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক গুপ্ত অভিযোগ করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম ১৫ দিন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এরপর থেকেই পুলিশ সকালে হকারদের সরিয়ে দিলেও বিকেল বেলা তারা ফিরে এসে ফুটপাত দখল করে নিচ্ছেন।’’ ব্যবসায়ীদের দাবি, পুলিশকে আরও কঠোর হতে হবে এবং নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে, যাতে এই সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়।

টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠক এবং পুলিশের অবস্থা

সম্প্রতি, টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে নিউ মার্কেট এলাকায় অবৈধ হকারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, অভিযোগ উঠেছে যে, ওই নির্দেশ সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। হকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই কলকাতা পুরসভায় টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে নিউ মার্কেট থানার পুলিশকে অবৈধ হকারদের (hawkers) সরানোর জন্য তিন দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’’

এদিকে, নিউ মার্কেট থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং হকারদের সরানোর চেষ্টা করছে। তবে অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশের অভিযান যথেষ্ট কার্যকরী হয়নি এবং হকাররা পুনরায় ফিরে এসে ফুটপাত দখল করে নিচ্ছেন।

হকারদের দখলমুক্ত ফুটপাত: প্রশাসনকে কী করতে হবে?

নিউ মার্কেটের পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, শুধু পুলিশের অভিযানেই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। নিউ মার্কেট বা শহরের অন্যান্য এলাকায় হকারদের দখলমুক্ত করতে হলে, প্রশাসনকে একটি সুসংগঠিত এবং কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

একদিকে যেমন পুলিশকে আরও কঠোর হতে হবে, তেমনি হকারদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের ফুটপাতে হকারদের অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি রোধ করতে হলে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা উচিত। যেমন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় হকারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজার বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তারা ব্যবসা করতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের জীবনধারণের ব্যবস্থা করতে পারবেন এবং শহরের পথচারীদের চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।

এছাড়া, হকারদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলো যাতে কার্যকরী হয়, তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। হকারদের সরে যাওয়ার পর তাদের পুনরায় ফিরে আসা রোধ করতে কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। নিয়মিত অভিযান, এলাকাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

শহরের উন্নয়ন এবং হকারদের জীবনযাত্রার ভারসাম্য

এই পরিস্থিতির মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, শহরের ফুটপাতে হকারদের কার্যত নিয়ন্ত্রণ করা এবং একইসাথে তাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগও বজায় রাখা। প্রশাসনকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান বের করতে হবে, যাতে শহরের নাগরিকরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন এবং হকারদের জীবনধারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

শুধুমাত্র কঠোর আইন প্রয়োগ নয়, বরং একটি স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা, যেখানে হকারদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া হবে এবং তাদের ব্যবসার পরিসর সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে তারা শহরের অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি না করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।

সুশৃঙ্খল শহরের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন

নিউ মার্কেটের ফুটপাতে হকারদের দাপট এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এটি কেবল নিউ মার্কেট নয়, কলকাতার অন্যান্য এলাকার জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন এবং পুলিশ যদি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারে, তবে এই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। শহরের ব্যবসায়ী এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থে প্রশাসনকে আরও কঠোর, দ্রুত এবং সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে। এর পাশাপাশি, হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে শহরের নাগরিকরা সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে পারেন এবং হকারদের জীবনযাত্রা বজায় থাকে।