বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং ISKCON পুরোহিতের গ্রেফতার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য রাঘবের

আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা (Raghav Chadha) শুক্রবার রাজ্যসভায় এক সাসপেনশন অফ বিজনেস (Suspension of Business) নোটিশ দিয়েছেন, যাতে “বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ…

Raghav Chadha Moves Rajya Sabha to Discuss Atrocities on Hindus in Bangladesh

আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা (Raghav Chadha) শুক্রবার রাজ্যসভায় এক সাসপেনশন অফ বিজনেস (Suspension of Business) নোটিশ দিয়েছেন, যাতে “বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ এবং ISKCON পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার” নিয়ে আলোচনা করার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি রাজ্যসভার (ISKCON) কার্যবিধি ও আচরণ সম্পর্কিত নিয়ম ২৬৭ অনুসারে এই নোটিশ দেন, যা নিয়মগুলো সাময়িকভাবে (ISKCON) স্থগিত রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা (ISKCON) করার জন্য সংসদে প্রস্তাব দেয়।

রাঘব চাড্ডা তার নোটিশে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি চান যে সংসদ এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এবং নিন্দা প্রকাশ করুক, বিশেষত বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন এবং ISKCON পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, রাজ্যসভা যেন সেইদিনের অন্যান্য কাজ এবং প্রশ্নোত্তর অধিবেশন স্থগিত করে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করে। চাড্ডা বলেছেন, “আমি চাই এই সংসদ একসাথে আলোচনা করে এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আটক ও বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানায়।”

   

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, একজন ISKCON পুরোহিত, ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির হওয়ার পর সেদিন তাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার পাশে একটি স্ট্যান্ডে অন্য একটি পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে, এবং অনেকেই তার অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেছেন।

গ্রেফতারির ঘটনাটি বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ISKCON (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বব্যাপী শান্তি, ভালোবাসা এবং সহনশীলতার বার্তা প্রচার করে আসছে। এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

এই গ্রেফতারি নিয়ে আলোচনার সময়, AAP নেতারা যেমন মণীশ সিসোদিয়া এবং সৌরভ ভারাদ্বাজও নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মণীশ সিসোদিয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, “বাংলাদেশে ISKCON-এর সঙ্গে যা ঘটছে, তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। ISKCON পৃথিবীজুড়ে ভালোবাসা এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়—এটি কোনভাবেই সন্ত্রাসী সংগঠন হতে পারে না। এই ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নয়, ভারতবর্ষেও তা মেনে নেওয়া হবে না। আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।”

সিসোদিয়া আরও জানান, “যতটুকু আমরা জানি, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার ধর্মীয় কর্তব্য পালন করছিলেন। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আটক করা অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং অবিচার। আমরা এই ধরনের শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানাই।”

এদিকে, রাঘব চাড্ডার প্রস্তাবের পর, নবান্নে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ISKCON এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হওয়া আক্রমণ এবং বিশেষ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে আলোচনা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেন এবং তিনি সরকারীভাবে এ সম্পর্কে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য উদ্যোগী হন।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে বহু বার সেখানে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়েছে, এবং এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। গত বছরের অমর একুশে বইমেলা, দুর্গাপূজা, এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের সময় হিন্দুদের উপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠেছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, এবং দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অটুট। তবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একে অপরের সমর্থন অপরিহার্য। এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তাই ভারতের পক্ষ থেকে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।