সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ সৃজনের নতুন পদ্ধতি, সাগর ব্লকে খাঁচা নির্মাণ রাজ্য সরকারের

রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগে সুন্দরবনের সমুদ্র উপকূলবর্তী চরগুলোতে ম্যানগ্রোভ (Mangrove) সৃজনের (creation) কাজ শুরু হয়েছে। সমুদ্রের জোয়ারের কারণে ম্যানগ্রোভ চারা স্থাপন করা সাধারণত সম্ভব নয়,…

Mangrove Sagar Block

short-samachar

রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগে সুন্দরবনের সমুদ্র উপকূলবর্তী চরগুলোতে ম্যানগ্রোভ (Mangrove) সৃজনের (creation) কাজ শুরু হয়েছে। সমুদ্রের জোয়ারের কারণে ম্যানগ্রোভ চারা স্থাপন করা সাধারণত সম্ভব নয়, কারণ ঢেউ এগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন সাগর ব্লকের (Sagar Block) বঙ্কিমনগরে একটি অভিনব পদ্ধতিতে (New Method) এই সমস্যার সমাধান খোঁজা হয়েছে।

   

এই পাইলট প্রজেক্টের আওতায় দীর্ঘ গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খাঁচা। জোয়ারের ঢেউ খাঁচায় ধাক্কা খেয়ে পলি জমাতে শুরু করছে। পলির স্তর উঁচু হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে ম্যানগ্রোভ সৃজনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্পটি রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর এবং নেদারল্যান্ডের একটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। পাইলিংয়ের মাধ্যমে গাছের গুঁড়ি বসিয়ে খাঁচা তৈরি করা হয়েছে, যাতে ঢেউয়ের তীব্রতা কমিয়ে পলি জমে এবং ম্যানগ্রোভ চারা রোপণের পরিবেশ তৈরি হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর কুমার জানা জানিয়েছেন, “এই প্রকল্পটি খতিয়ে দেখে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। এর মাধ্যমে সুন্দরবনের অনেক চরকে ম্যানগ্রোভ সৃজনের উপযোগী করা যাবে।”

ম্যানগ্রোভ (Mangrove) অরণ্য উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঝড়ের গতি শিথিল করে এবং সমুদ্র বা নদীর জলস্তরের আক্রমণ থেকে বাঁধকে রক্ষা করে। অতীতে আয়লা এবং উম্পুনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সুন্দরবনের অনেক ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে এসব চরগুলোকে পুনরুদ্ধার করা হবে।

এছাড়া, রাজ্য সরকারের বন দপ্তর এই অর্থবর্ষে ১৩ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ম্যানগ্রোভ ইনিশিয়েটিভ ফর শোরলাইন হ্যাবিট্যাটস অ্যান্ড ট্যাঞ্জিবল ইনকাম’ (মিস্টি) প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের ৩৩৫ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণ করা হবে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে প্রায় ২০০০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়েছিল এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ১৬৫৯ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।

এই প্রকল্পের সফলতা শুধু সুন্দরবনকে পরিবেশগতভাবে শক্তিশালী করবে না, বরং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিপর্যয়কালে আরও সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধি আনবে। ম্যানগ্রোভ (Mangrove) সৃজনের এই উদ্যোগ এলাকার পরিবেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে কাজ করবে।