ইমরানের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদ অভিমুখে হাজারো পাকিস্তানির পদযাত্রা

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে পদযাত্রা (PTI protest Islamabad) শুরু করেছেন। দলটির…

Thousands March in Islamabad as PTI Demands Imran Khan’s Release and Restoration of Democracy

short-samachar

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে পদযাত্রা (PTI protest Islamabad) শুরু করেছেন। দলটির দাবি, এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও এর উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার।

   

পিটিআই-এর দাবি ও বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট
পিটিআই-এর পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ জানানো হয়েছে, “হাজার হাজার পাকিস্তানি শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামাবাদ অভিমুখে পদযাত্রা করছেন।” দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনগণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
১. সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ২৬তম সংশোধনী বাতিল
২. চুরি যাওয়া জনমত ফেরত আনা
৩. রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি

ডন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রতিবাদ কর্মসূচি মূলত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বিক্ষোভকারীরা আগের রাতেই যাত্রা বিরতি নেন এবং তারপর থেকেই পিটিআই কর্মী ও সমর্থকরা রাজধানী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। পিটিআই নেতারা জানিয়েছেন, “এটি আমাদের জন্য জীবন-মৃত্যুর লড়াই। আমরা তাড়াহুড়ো করছি না, কিন্তু লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পিছু হঠব না।”

আইনি বাধা এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পিটিআই-এর পরিকল্পিত বিক্ষোভকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে এবং সরকারের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দেয়, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তবে পিটিআই সমর্থকরা পুলিশের ব্যাটন চার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং গ্রেফতারি সত্ত্বেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাঞ্জাব প্রদেশের সরকারও সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেকশন ১৪৪-এর মেয়াদ আরও তিন দিনের জন্য বাড়িয়েছে। এর ফলে বৃহস্পতি পর্যন্ত যে কোনও ধরনের জনসমাবেশ বা জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া ইসলামাবাদ প্রশাসন থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিবাদ চলাকালীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

ইমরান খানের পরিবার এবং দলের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে পিটিআই-এর শীর্ষ নেতারা পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন এবং ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমরান খানের দুই বোন—আলিমা খান এবং উজমা খান। পিটিআই-এর অফিসিয়াল এক্স পেজে জানানো হয়েছে, “ইমরান খানের বোনরা ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন, যেখানে লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানি সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং সামরিক সমর্থিত স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের দাবিতে একত্রিত হচ্ছেন।”

পিটিআই জানিয়েছে, ইমরান খান বর্তমানে ৪৭০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্দি রয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে এই দীর্ঘ বন্দিত্বের অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হয়েছে।

ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির বক্তব্য
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি সোমবার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন শেষ হবে না।” তিনি আরও জানান, পিটিআই-এর কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্য হলো দলের নেতাকে মুক্ত করে তাঁর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

বিক্ষোভের গুরুত্ব এবং সম্ভাব্য প্রভাব
এই আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পিটিআই-এর দাবি, তাদের নেতা ইমরান খানের বন্দিত্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই দাবির বিষয়ে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

ইসলামাবাদের এই বিক্ষোভ শুধু পাকিস্তানের রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পিটিআই সমর্থকরা বলছেন, এটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআই পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়েছে। এই আন্দোলন কি তাদের পুরনো শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারবে, নাকি এটি তাদের জন্য আরও একটি কঠিন অধ্যায় হবে, তা সময়ই বলবে।

ইসলামাবাদে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জনগণ তাঁদের দাবি ও অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা দেশটির ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।