নতুন মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2024)-এ কেরালা ব্লাস্টার্সের যাত্রা শুরু হয়েছে সুইডিশ কোচ মিকেল স্ট্যাহরের (Mikael Stahre) নেতৃত্বে। যদিও প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী পাঞ্জাব এফসির কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল, তবে মরসুমের মাঝামাঝি সময়ে দারুণ ছন্দে ফিরেছিল দক্ষিণ ভারতের এই ক্লাব। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারার কারণে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ থেকে ধীরে ধীরে নিচে নেমে যেতে হয়েছিল।
টানা তিন ম্যাচে পরাজয়ের ধাক্কা কাটিয়ে কেরালা ব্লাস্টার্স গত রবিবার জয়ের সরণিতে ফিরে এসেছে। দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী ডার্বিতে তাঁরা শক্তিশালী চেন্নাইয়িন এফসিকে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করেছে। এই ম্যাচে কেরালার ফরোয়ার্ড লাইন, বিশেষত তরুণ ফুটবলার কোরো সিং-এর অসাধারণ পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। ম্যাচ শেষে কোচ মিকেল স্ট্যাহরেও কোরোর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে জয়ের গল্প
রবিবারের দক্ষিণ ডার্বি ছিল কেরালা ব্লাস্টার্সের মরসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ। শুরু থেকেই চেন্নাইয়িন এফসি গোল করার একাধিক সুযোগ তৈরি করেছিল, তবে হরমিপাম রুইভার শক্তিশালী রক্ষণ এবং গোলরক্ষক সোম কুমারের অসাধারণ পারফরম্যান্স চেন্নাইয়িনের প্রতিটি আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয়। অন্যদিকে, কেরালা ব্লাস্টার্স ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে শুরু করে।
উরুগুয়ান মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান লুনা পুরো ম্যাচজুড়ে কেরালার আক্রমণকে দিশা দেখিয়েছেন। যদিও নিজে গোল পাননি, তবে সতীর্থদের গোল করানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এছাড়া, ফরোয়ার্ড লাইনে জেসুস জেমিনেজ এবং রাহুল কেপির সাথে তাল মিলিয়ে তরুণ কোরো সিং দলের আক্রমণে প্রাণসঞ্চার করেন।
কোরো সিং-এর পারফরম্যান্সে মুগ্ধতা
বছর কয়েক আগেও কোরো সিং ছিলেন সুদেবা দিল্লির যুব দলের ফুটবলার। সেখান থেকে কেরালা ব্লাস্টার্সের যুব দলে আসেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করে সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন এই তরুণ ফুটবলার। চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচে কোরো নিজে গোল করতে না পারলেও, সতীর্থদের জন্য গোলের সুযোগ তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষে কোচ মিকেল স্ট্যাহরে বলেন,
“কোরো সত্যিই একজন প্রতিভাবান ছেলে। সে অসাধারণ দক্ষতার অধিকারী। বিশেষ করে তার গতি এবং এক-এর বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা চমৎকার। তবে, সে এখনও পুরো ৯০ মিনিটের জন্য প্রস্তুত নয়। আরও কিছু সময় দরকার।”
স্ট্যাহরের এই মন্তব্য কোরোর প্রতি তাঁর আস্থার পরিচয় দেয়। কোচ মনে করেন, তরুণ এই ফুটবলার ভবিষ্যতে কেরালা ব্লাস্টার্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠবেন।
কেরালা ব্লাস্টার্সের মরসুমের চ্যালেঞ্জ
কেরালা ব্লাস্টার্সের জন্য চলতি মরসুমটা এখনও পর্যন্ত ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে দারুণ ছন্দে থাকলেও টানা তিন ম্যাচ হারের পর পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে পড়ে তারা। তবে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে জয় এই দলকে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সাহায্য করেছে।
দলের রক্ষণভাগে হরমিপাম রুইভার মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার এবং গোলপোস্টে সোম কুমারের মতো প্রতিভাবান গোলরক্ষক থাকায় কোচ স্ট্যাহর আত্মবিশ্বাসী। তবে ফরোয়ার্ড লাইনে আরও ধারাবাহিকতা আনতে হবে। কোরো সিং-এর মতো তরুণ ফুটবলাররা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে কেরালা ব্লাস্টার্স আবারও শীর্ষে উঠে আসতে পারে।
কোরোর ভবিষ্যৎ এবং কোচের পরিকল্পনা
কোরো সিং-এর মতো তরুণ প্রতিভারা শুধু কেরালা ব্লাস্টার্স নয়, গোটা আইএসএল-এর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যাহরের নেতৃত্বে কোরোর মতো ফুটবলাররা নিজের দক্ষতা আরও শাণিত করার সুযোগ পাচ্ছেন। কোচের মতে, “তরুণ ফুটবলারদের জন্য ধৈর্য এবং অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোরো এক্ষেত্রে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ভবিষ্যতে সে দলের জন্য আরও বড় ভূমিকা পালন করবে।” কোরোর প্রতি কোচের এই আস্থা তাঁকে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে উদ্বুদ্ধ করবে, তা বলাই বাহুল্য।
চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে জয় শুধু কেরালা ব্লাস্টার্সের পয়েন্ট টেবিলে ফেরা নয়, তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ারও একটি বড় ধাপ। তরুণ কোরো সিং-এর মতো প্রতিভাবান ফুটবলাররা দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তুলছে। কোচ মিকেল স্ট্যাহরের নেতৃত্বে এই দল আরও ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
কেরালা ব্লাস্টার্সের সমর্থকরা এখন তাকিয়ে আছে পরবর্তী ম্যাচের দিকে। সেখানে কোরো এবং তাঁর সতীর্থরা কীভাবে নিজেদের সেরাটা তুলে ধরবে, তা দেখার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সকলে।