রাজ্যে আলুর খুচরো বাজারে দাম (Potato seeds price) বাড়ানোর প্রবণতা নিয়ে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এবার চাষিদের মধ্যে আলুর বীজের দাম নিয়ে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর বীজের দাম (Potato seeds price) অনেকটাই বেশি। শুধু তাই নয়, সারের কালোবাজারির বিষয়েও কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
একদিকে দাম বাড়ানোর কারণে আলু চাষের (Potato seeds price) খরচ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে সঠিক মূল্য পাওয়ার আশায় আলু চাষ কমানোর দিকে চলে যাচ্ছেন অনেক চাষি। এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কৃষকরা খুবই চিন্তিত এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
বর্তমানে, বাজারে চন্দ্রমুখী আলুর বীজের দাম (Potato seeds price) প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৪ হাজার টাকার কাছাকাছি। একইভাবে, জ্যোতি আলুর বীজের দাম (Potato seeds price) প্রতি বস্তায় ৩ হাজার টাকার আশপাশে। পাঁচ বছর আগে রাজ্য সরকার আলু বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে সে উদ্যোগ থেকে এখনও রাজ্যের কৃষকরা সেভাবে সুবিধা পাননি। যার ফলে,রাজ্যের চাষিরা পঞ্জাবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন আলু বীজের জন্য। অভিযোগ উঠছে, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যবসায়ী মুনাফা লুটছে এবং আলু বীজের দাম (Potato seeds price) অত্যধিক বাড়াচ্ছে।
আলুর দাম বৃদ্ধির সময় প্রশাসন নজর রাখলেও, আলু বীজের দাম এবং সারের কালোবাজারি নিয়ে তেমন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা। তাঁদের মতে, যখনই খুচরো বাজারে আলুর দাম বাড়ে, তখন প্রশাসন তৎক্ষণাৎ হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু আলু চাষের খরচ বৃদ্ধি পেলে এবং বীজ ও সার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে প্রশাসন কিছুই করে না। কৃষকদের প্রশ্ন, যদি বীজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তবে তারা কীভাবে আয় করতে পারবেন? এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা আগামী বছরেও সাধারণ মানুষের কাছে চড়া দামে আলু বিক্রির আশঙ্কা করছেন।
এছাড়া, এবছর আলু চাষের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। আবহাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি না থাকার কারণে ফলনের পরিমাণ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষত, চন্দ্রমুখী আলু চাষের জন্য এই বছর আবহাওয়া একেবারে অনুকূল ছিল না। এর ফলস্বরূপ, আগামী বছর চন্দ্রমুখী আলুর সরবরাহ কম হতে পারে বলে কৃষকদের আশঙ্কা।
এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারম মান্না বলেন, “পঞ্জাব থেকে রাজ্যে আলু বীজ আসছে, ফলে এর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও হাত নেই। তবে যদি সারের কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে, তাহলে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।” তিনি আরো জানান, রাজ্যের চাষিদের সুবিধার্থে বীজ আলু উৎপাদনের জন্য রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগামী বছর থেকে যদি চাহিদা বাড়ে, তবে বীজ আলু উৎপাদনের উপর আরও বেশি জোর দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ আলু বীজ ব্যবসায়ী রাজ্যের সম্পাদক স্বপন সামন্ত জানিয়েছেন, “প্রথম দিকে আলু বীজের দাম কিছুটা চড়া ছিল, তবে বর্তমানে দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে।” তিনি আরো বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল।
তবে, কৃষকদের অভিযোগ এখনও মেলেনি, এবং রাজ্য সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাঁদের দাবি, যদি সরকার আলু বীজ উৎপাদনের উদ্যোগকে সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারে এবং সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে পারে, তবে আগামী বছর কৃষির পরিসর আরও উন্নত হতে পারে এবং কৃষকরা তাদের ফসলের সঠিক দাম পেতে পারবেন।
রাজ্য সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে কৃষকরা তাদের চাষের খরচ কমাতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে আলুর দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে। কৃষকদের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে শুধু কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যের মূল্যও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।