রবিবার দক্ষিণের ডার্বিতে (Southern Derby) কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি চেন্নাইয়িন এফসিকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বড় জয় তুলে নিয়েছে। কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে গোল করেন জেসুস জেমিনেজ স্যাঞ্চেজ, মরোক্কোর তারকা নোয়া সাদাউ, এবং রাহুল কে পি। কেরালার এই দাপুটে জয়ের ফলে তারা ৯ ম্যাচ শেষে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল পয়েন্ট টেবিলের আট নম্বরে উঠে এসেছে।
ডার্বির আগে টানা তিনটি ম্যাচে হারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছিল কেরালাকে। মহামেডান ম্যাচের পর দলের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছেছিল। তবে এই জয় দলের ফুটবলারদের মনোবল বাড়াবে বলে মনে করছেন কেরালা সমর্থকরা।
প্রথমার্ধে জমাট লড়াই
প্রথম থেকেই কেরালা ব্লাস্টার্সের খেলোয়াড়দের আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায়। কিন্তু চেন্নাইয়িন এফসি কোচ ওয়েন কোয়েলের দলের প্রতিরোধও ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। চেন্নাইয়িন দলের ডিফেন্সিভ লাইন বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেয়। বিশেষ করে চেন্নাইয়িন গোলরক্ষক নীরজ কুমার প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেন।
অন্যদিকে, কেরালার তরুণ গোলরক্ষক সোম কুমারও সমানভাবে নজর কাড়েন। চেন্নাইয়িন এফসির কয়েকটি আক্রমণ রুখে দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন, বড় মঞ্চেও তিনি প্রস্তুত। প্রথমার্ধে দুই দলের জমাট লড়াইয়ে গোলশূন্য অবস্থায় ম্যাচ শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে কেরালার আধিপত্য
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের রাশ পুরোপুরি নিজের দখলে নিয়ে নেয় কেরালা ব্লাস্টার্স। ৫৫ মিনিটে দলের প্রথম গোলটি করেন জেসুস জেমিনেজ। গোলের পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে কেরালা। ৭৩ মিনিটে মরোক্কোর স্ট্রাইকার নোয়া সাদাউ দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন।
শেষ মুহূর্তে রাহুল কে পি চেন্নাইয়িন ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে একটি দুর্দান্ত গোল করেন। রাহুলের গোলটি শুধু ম্যাচে জয় নিশ্চিত করাই নয়, বরং দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়তি উচ্ছ্বাস এনে দেয়।
ম্যাচ শেষে ওয়েন কোয়েলের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে চেন্নাইয়িন এফসি কোচ ওয়েন কোয়েল কেরালা ব্লাস্টার্সের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “কেরালা ব্লাস্টার্স তাদের যোগ্যতা দেখিয়েই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে ম্যাচে এমন কিছু মুহূর্ত ছিল যেখান থেকে আমরা সমতায় ফিরতে পারতাম। আমাদের খেলোয়াড়দের কয়েকটি ভালো সুযোগ ছিল, কিন্তু আমরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।”
নিজেদের পারফরম্যান্সের বিষয়ে কোয়েল বলেন, “শেষ ছয়টি ম্যাচের মধ্যে তিনটি অ্যাওয়ে এবং তিনটি হোম ম্যাচ খেলেছি। হোম ম্যাচগুলোতে পুরো পয়েন্ট অর্জন করতে পারলে ভালো হত। তবে এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।” কোয়েল আরও বলেন, “আগামী ম্যাচেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। দলের ভুলগুলো শুধরে পরবর্তী ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করব।”
চেন্নাইয়িনের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজন
ডার্বি হারের পর চেন্নাইয়িন এফসি এখন পয়েন্ট টেবিলের দশম স্থানে অবস্থান করছে। তাদের পরবর্তী ম্যাচে জয় না পেলে প্লে-অফে যাওয়ার আশা প্রায় শেষ হয়ে যাবে। দলের রক্ষণভাগের পাশাপাশি আক্রমণভাগেও উন্নতি প্রয়োজন। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের গোল করার দক্ষতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
কেরালার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
এই জয়ের পর কেরালা ব্লাস্টার্স আত্মবিশ্বাসের সাথেই পরবর্তী ম্যাচে নামবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং পয়েন্ট টেবিলে আরও ওপরে উঠে আসা। কোচ মিকেল স্ট্যাহর বলেছেন, “এই জয় দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরবর্তী ম্যাচেও এই ধারা বজায় রাখা।” ডার্বি জয়ের পর কেরালার সমর্থকরা যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত। তাদের আশা, টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতেও দল একই রকম পারফরম্যান্স দেখাবে।
কেরালা ব্লাস্টার্স বনাম চেন্নাইয়িন এফসি ম্যাচটি শুধুমাত্র একটি ডার্বি নয়, বরং আইএসএলের দুই বড় দলের লড়াই হিসেবে মনে করা হয়। এই ম্যাচে কেরালা যোগ্য দল হিসেবে জয় তুলে নিয়েছে। তবে চেন্নাইয়িন এফসির জন্য এখন ঘুরে দাঁড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে এই দুই দলের আরও জমজমাট লড়াই দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।