ট্যাব ফান্ড স্ক্যামে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থেকে গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়ারি থানার যৌথ অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের মাটিগাড়া এলাকা থেকে ট্যাবলেট ফান্ড স্ক্যামে (Tab Fund Scam) যুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।…

Two Arrested in Siliguri for Involvement in Tab Fund Scam

short-samachar

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়ারি থানার যৌথ অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের মাটিগাড়া এলাকা থেকে ট্যাবলেট ফান্ড স্ক্যামে (Tab Fund Scam) যুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই স্ক্যামের সাথে জড়িত সন্দেহভাজনরা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন কেনার জন্য বরাদ্দ টাকা আত্মসাৎ করে অন্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছিলেন। শনিবার মাটিগাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

   

গ্রেপ্তারকৃতদের নাম নজরুল ইসলাম (২০) এবং রুকসানা খাতুন (৫০), তারা শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ট্যাবলেট ফান্ড স্ক্যামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

স্ক্যামের বর্ণনা ও তদন্ত
পুলিশ জানিয়েছে যে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়ারি থানার লাল বাহাদুর হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র দাসের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই স্ক্যামের তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকা রুকসানা খাতুন এবং নাজরুল ইসলামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছিল। এরপর তারা ওই টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করে।

কেশিয়ারি পুলিশ স্টেশনের অফিসাররা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়িতে হানা দেন এবং গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। তদন্তকারীরা অভিযোগ করেন যে, ওই টাকা তারা ব্যক্তিগতভাবে তুলে নিয়েছেন এবং অর্থের স্থানান্তরের পিছনে কোনো অবৈধ উদ্দেশ্য ছিল।

এছাড়া, মাটিগাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে যে, এদের সঙ্গে জড়িত আরও একজন ব্যক্তি মো. মেহবুব (৩০), যিনি নৌকাঘাটের বাসিন্দা, তাকে নবজলপাইগুড়ি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ পর্যন্ত এই স্ক্যাম সংক্রান্ত সাতজনকে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য ও আইনি পদক্ষেপ
কেশিয়ারি পুলিশ স্টেশনের অফিসাররা গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩১৮ (২), ৩১৮ (৪), ৬১ (২) ধারায় মামলা রুজু করেছেন। এই ধারাগুলির অধীনে বেআইনি অর্থ স্থানান্তর এবং স্ক্যামের অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্তরা সরকারী প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং তা বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছে। এর মাধ্যমে তারা সরকারি অর্থের অপব্যবহার করেছে।

এদিকে, পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, অভিযুক্তদের আদালত থেকে তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আরও বিস্তারিত তদন্ত ও সাক্ষী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের স্ক্যাম ও অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই স্ক্যামের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে, যারা প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েনি। পুলিশ তাদের খোঁজে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

স্ক্যামের প্রভাব এবং এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এটি একটি বড় ধরনের ট্যাবলেট ফান্ড স্ক্যাম, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থের অপব্যবহার করেছে। এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও তাদের ভবিষ্যতের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এই ধরনের স্ক্যাম ছড়িয়ে পড়ে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন যে, এই ধরনের অপরাধগুলো সরকারী প্রকল্পের স্বচ্ছতার ওপর আঘাত হানছে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।

শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এবং তারা পুলিশকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসীরা দাবি করেছেন, এই ধরনের অপরাধীরা কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের স্ক্যাম বন্ধ হয়। একই সঙ্গে, তারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাগিদ দিয়েছেন যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।

পুলিশের তদন্ত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পুলিশ জানিয়েছে যে, এ ধরনের স্ক্যামগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা আশ্বাস দিয়েছে যে, যেকোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের পাশাপাশি অন্যরা কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

এছাড়া, পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে এসব ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। সেই সঙ্গে, সরকারি প্রকল্পের তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পশ্চিম মেদিনীপুর এবং শিলিগুড়ি অঞ্চলে ঘটিত ট্যাবলেট ফান্ড স্ক্যামটি সরকারের শিক্ষা তহবিলের অপব্যবহারের একটি বড় উদাহরণ। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত এবং তাদের শিক্ষার সুযোগের প্রতি বড় ধরনের আঘাত। পুলিশ এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে যে, এই তদন্তের মাধ্যমে আরও অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে।