ভারতীয় দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দা (Rameshbabu Praggnanandhaa) রবিবার আহমেদাবাদ ম্যারাথন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে এর গুরুত্ব এবং সম্প্রদায়ের প্রতি ইতিবাচক প্রভাবের প্রশংসা করেছেন। আহমেদাবাদ ম্যারাথনের ৮ম সংস্করণটি রবিবার অনুষ্ঠিত হয় এবং এই ইভেন্টে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞানন্দা। ম্যারাথনটি সমগ্র শহরজুড়ে একটি উৎসবের মতো আয়োজিত হয়েছিল, যেখানে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রজ্ঞানন্দা এই ইভেন্টে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “আমি এখানে এসে খুবই খুশি, এবং এই ম্যারাথন ইভেন্টটি দেখে আমি খুবই আনন্দিত।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি খুব ভাল উদ্যোগ, এবং আমি খুব খুশি যে এত মানুষ সকালে উঠে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করছে।” তার এই মন্তব্য সমাজের প্রতি ঐক্যবদ্ধতা এবং শারীরিক সুস্থতার প্রতি তার উত্সাহ প্রকাশ করে। প্রজ্ঞানন্দার উপস্থিতি ম্যারাথন ইভেন্টটিকে বিশেষ একটি স্পর্শ দিয়েছে এবং তিনি তার উত্সাহব্যঞ্জক কথা দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রেরণা যুগিয়েছেন।
আহমেদাবাদ ম্যারাথনটি আদানি স্পোর্টলাইন কর্তৃক আয়োজিত একটি বার্ষিক রান, যা সারা দেশের লোকদের শারীরিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হয়। ম্যারাথনে চারটি অংশগ্রহণকারী ক্যাটাগরি ছিল: পূর্ণ ম্যারাথন (৪২.১৯৫ কিমি), অর্ধ ম্যারাথন (২১.০৯৭ কিমি), ১০ কিমি রান এবং ৫ কিমি রান। এই ম্যারাথনটি অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথনস অ্যান্ড ডিস্ট্যান্স রেসেস কর্তৃক সার্টিফাইড। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ম্যারাথনের পথ পরিবর্তন করা হয়, এবং এটি দ্বিতীয় সংস্করণ ছিল ওই মনোরম ট্র্যাকে। ট্র্যাকটি শহরের একাধিক আইকনিক স্থান যেমন অতল ব্রিজ, গান্ধী আশ্রম, এবং এলিস ব্রিজের মধ্য দিয়ে চলে। গত বছর ৭ম সংস্করণে ২০,০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী অংশ নিয়েছিলেন।
প্রজ্ঞানন্দা তার বক্তব্যে আরও বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগগুলো শুধু ব্যক্তিগত শারীরিক সুস্থতা অর্জনই নয়, বরং সমাজের মধ্যে একতাবদ্ধতার অনুভূতিও তৈরি করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকি, এবং এই ধরনের আয়োজন সেই পথের সূচনা করে।”
তিনটি দুর্দান্ত দিক উল্লিখন করেন প্রজ্ঞানন্দা—প্রথমত, ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সঠিক প্রস্তুতি এবং অনুপ্রেরণা দেওয়া, দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি অঙ্গনে সক্রিয় হওয়া, এবং তৃতীয়ত, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তুলে ধরা। তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যদি নিজেদের সুস্থ রাখতে চাই, তাহলে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব আয়োজনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলে একদিকে যেমন শারীরিক শক্তি বাড়ে, তেমনি সমাজে একটি ঐক্য গড়ে ওঠে।”
এদিন প্রজ্ঞানন্দার উপস্থিতি এবং বক্তব্য ম্যারাথন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক নতুন শক্তি যোগ করেছে। তার উৎসাহজনক কথাগুলি সবাইকে আরও বেশি উদ্যমী করে তোলে, এবং মঞ্চে উঠে ম্যারাথনের উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার পর, তিনি অগ্রগতি ও সহানুভূতির বার্তা দিয়েছেন। ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সাহায্য করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া প্রজ্ঞানন্দা তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অনুভূতি শেয়ার করে আরও বলেন, “ম্যারাথনটি শুধু একটি শারীরিক প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি মানসিক যাত্রাও। সকলে একত্রে একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জন করতে চলেছে—তাদের সুস্থতা এবং ফিটনেসে উন্নতি সাধন। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠায় যে, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তবে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।”
এদিকে, আহমেদাবাদ ম্যারাথনটি এখন শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি লাভ করেছে। বিগত কয়েক বছরে এটি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক দৌড়বিদদের আকর্ষণ করেছে। এ বছরও, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দৌড়বিদরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছেন এবং আন্তর্জাতিক দৌড়বিদদের দলও অংশগ্রহণ করেছে। এটি শুধুমাত্র আহমেদাবাদ শহরের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত
এছাড়াও, ম্যারাথনের আয়োজকরা প্রতিটি দৌড়বিদকে মেডেল, সন্মাননা এবং অন্যান্য উপহার প্রদান করেন, যাতে তাদের উৎসাহিত করা হয়। স্বাস্থ্যের প্রতি এই সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে, স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। আহমেদাবাদ ম্যারাথনটি সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল এক ইভেন্ট হিসেবে সফলভাবে জায়গা করে নিয়েছে এবং শারীরিক সুস্থতার প্রচারে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আহমেদাবাদ ম্যারাথন শুধুমাত্র একটি দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন যেখানে শারীরিক সুস্থতা, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং একতা প্রতিফলিত হয়। প্রজ্ঞানন্দার মত একজন গ্র্যান্ডমাস্টারের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।