বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি! প্রতিবাদে বাংলাপক্ষ রাজপথে

Bengali Identity Under Attack: সম্প্রতি কলকাতা মেট্রোরেলে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক অবাঙালি হিন্দিভাষী মহিলা…

Bangla Paksha protest

Bengali Identity Under Attack: সম্প্রতি কলকাতা মেট্রোরেলে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক অবাঙালি হিন্দিভাষী মহিলা বাংলাভাষী এক মহিলাকে বাংলাদেশি বলে আক্রমণ করছেন। কারণ? তিনি বাংলার মাটিতে বাংলায় কথা বলেছিলেন এবং হিন্দি বলতে অস্বীকার করেছিলেন। হিন্দিভাষী মহিলার দাবি ছিল, ভারতে থাকতে হলে হিন্দি জানতেই হবে। এই বক্তব্য, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের ছায়া, বাঙালি জাতিসত্তার জন্য এক মারাত্মক আঘাত।

এমন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত বহিরাগতদের প্রাধান্য যেখানে বেশি—শিলিগুড়ি, আসানসোল, ব‍্যারাকপুরে—এই ধরনের জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটে চলেছে। এটি বাঙালিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। বাংলার মানুষ যে বিদেশি নয়, এই সহজ সত্যটিকে প্রত্যাখ্যান করে জাতীয়তাবাদকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

   

এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ ধর্মতলায় রাস্তায় নামে বাংলাপক্ষ, একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন। ধর্মতলার এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে প্রায় দুই শতাধিক সদস্য এবং অসংখ্য পথচলতি সাধারণ বাঙালি।

ধর্মতলায় বাংলার গর্জন
বাংলাপক্ষের শীর্ষ পরিষদ সদস্য এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন,
“বাংলার মাটিতে বাঙালি আজ আক্রান্ত। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, এমনকি পরিচয়ও হুমকির মুখে। আজ মেট্রোরেলের ঘটনায় প্রকাশ্যে এলো যে, বাঙালি তার নিজের দেশে বাঙালি হিসেবে থাকতে পারবে না? ভারতে থাকতে গেলে হিন্দি জানতেই হবে—এমন জোরজবরদস্তি আমরা আর মেনে নেব না।”
তিনি আরও বলেন,
“বাংলাপক্ষ আগামী দিনে এমন এক বাংলা গড়বে, যেখানে কেউ বাঙালি বা বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ করার সাহস পাবে না। আজকের এই গর্জন সেই পথেই এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।”

আইনি ব্যবস্থা ও দাবি
সভা থেকে বাংলাপক্ষ সরাসরি প্রশাসনের কাছে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। লালবাজার সাইবার ক্রাইম শাখায় ওই হিন্দিভাষী মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাপক্ষের সদস্যরা বলেন,
“এ ধরনের জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ শুধু বাঙালির মানহানি নয়, এটি সরাসরি ভারতের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। আমরা চাই, অবিলম্বে ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হোক এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
বক্তাদের বার্তা
অন্যান্য শীর্ষ পরিষদ সদস্যদের মধ্যে অরিন্দম চ্যাটার্জি বলেন,
“আজ ধর্মতলা বাঙালির প্রতিরোধের নতুন ইতিহাস দেখল। বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনো হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ বরদাস্ত করব না। এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সারা বাংলায় আন্দোলন গড়ে তুলব।”
সভায় আরও বক্তব‍্য রাখেন সংগঠনের অন্যান্য নেতারা, যেমন সৌম্যকান্তি ঘোড়ই, ডা. আব্দুল লতিফ, সৌম্য বেরা, কুশনাভ মণ্ডল, পিন্টু রায় এবং প্রীতি মিত্র।
তাঁরা একমত হন যে,
“বাংলায় স্থায়ীভাবে থাকতে হলে, চাকরি বা ব্যবসা করতে হলে, বাংলা ভাষা শিখতেই হবে। অন‍্য যে কোনো রাজ্যে যেমন স্থানীয় ভাষার গুরুত্ব থাকে, বাংলাতেও সেটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত।”

বাঙালির ঐক্যের ডাক
ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বার্তা দেওয়া হয়, এখন বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কৌশিক মাইতি বলেন,
“এই জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ শুধু কিছু মানুষের অপরাধ নয়, এটি বহিরাগত তোষণের ফল। আমাদের ঐক্যের মাধ্যমেই এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। বাংলার মাটিতে যারা থাকবেন, তাঁদের বাংলা ভাষাকে সম্মান করতেই হবে।”

মেট্রোরেলে বাঙালি মহিলার সঙ্গে এই জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ কেবলমাত্র এক চিত্র। এটি বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ক্রমবর্ধমান উপেক্ষার একটি উদাহরণ। তবে বাংলাপক্ষের আজকের প্রতিবাদ ও সমাবেশ দেখিয়েছে, বাঙালি তার মাটিতে মাথা নত করবে না।
বাংলা পক্ষের এই উদ্যোগ বাংলা ভাষা ও বাঙালির অধিকারের জন্য এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করতে চলেছে। “বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি”—এই অপবাদকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে বাঙালি এবার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের পথে হাঁটছে।