পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যায় নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্চল স্টেডিয়ামে শুরু হয় আইলিগের (I-League 2024) নতুন মরসুম। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বারাণসীর ইন্টার কাশী ফুটবল ক্লাব (Inter Kashi FC) ও স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরুর মধ্যে জমজমাট লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর, যেখানে ১-০ গোলে বেঙ্গালুরুকে (Bengaluru FC) হারিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইন্টার কাশী। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ভারতীয় ফরোয়ার্ড এডমন্ড লালরিনডিকা। এই জয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে ইন্টার কাশী, গোল পার্থক্যের কারণে শীর্ষে রয়েছে গোকুলাম কেরালা এফসি।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে মাঠে নামে ইন্টার কাশী। কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পর এই প্রথম তাদের মাঠে নামা ছিল। তিনি যে দলের গঠনশৈলী এবং আক্রমণাত্মক খেলার প্রতি মনোযোগী তা বোঝা যায়, কারণ তাঁর হাতে থাকা ফুটবলাররা শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে আক্রমণের ঝড় তুলে।
ইন্টার কাশী দলে ফিনল্যান্ডের তারকা ফুটবলার জনি কাউকো ও সুমিত পাসির মতো ফুটবলাররা থাকায় দলটির আক্রমণাত্মক শক্তি অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের একের পর এক আক্রমণে বেঙ্গালুরুর রক্ষণভাগ বেশ চাপে পড়েছিল, তবে প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। প্রথমার্ধের শেষে স্কোরলাইন ছিল ০-০।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হলে বেঙ্গালুরুর পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়। আরিফ শেখ এবং কৃষ্ণা নন্দ সিংহদের আক্রমণও ছিল যথেষ্ট বিপজ্জনক। তবে বেঙ্গালুরুর গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করেন। বারংবার সুযোগ পেলেও বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়রা গোল করার ব্যর্থতা দেখান।
এরপর ম্যাচের ৭২ মিনিটে এডমন্ড লালরিনডিকা একটি দুর্দান্ত গোল করেন। বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে তিনি বলটি জালে পাঠান। এই একমাত্র গোলেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। বেঙ্গালুরুর পক্ষ থেকে একাধিক আক্রমণ হলেও গোল না আসায় শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের ব্যবধানে ইন্টার কাশী ম্যাচটি জিতে নেয়।
এটি ইন্টার কাশীর জন্য একটি ঐতিহাসিক শুরু। গত মরসুমে অনেক চেষ্টা করেও আইলিগে সফলতা পায়নি তারা, তবে এবার দলের কোচ হিসেবে আইএসএল জয়ী কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের সাথে মাঠে নামতে পেরে তারা আশাবাদী। হাবাসের আক্রমণাত্মক ফুটবল দর্শন এবং দক্ষতার প্রতি তার বিশ্বাস দলের মধ্যে এক ধরনের নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে।
এবারে ইন্টার কাশী দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাদের আক্রমণ। দলের অন্যতম প্রধান শক্তি জনি কাউকো, যিনি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার জন্য বিখ্যাত। এদিকে, দলের কিপার এবং ডিফেন্ডাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। বিশেষ করে গোলরক্ষক রাহুল কুমারের অসাধারণ সেভগুলি প্রশংসার দাবি রাখে।
তবে, দলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন লালরিনডিকা, যিনি দলকে একমাত্র গোল এনে দেন এবং ম্যাচের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজে কৃতিত্ব অর্জন করলেও সমগ্র দলটি একযোগভাবে মাঠে পারফর্ম করেছিল, যা একটি পরিপূর্ণ জয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
বর্তমানে ইন্টার কাশী তিন পয়েন্ট নিয়ে আইলিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম ম্যাচের জয়ে তারা শক্তিশালী শুরু করেছে, আর তাদের লক্ষ্য হলো এই ধারা বজায় রাখা। আগামী ম্যাচগুলিতে তারা আরও কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে, কিন্তু তাদের এই শক্তিশালী উদ্বোধনী জয় তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
সত্যি বলতে, ইন্টার কাশী নতুন মরসুমে একটি নতুন চেহারা নিয়ে মাঠে নামল এবং তাদের এই পারফরম্যান্স তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে হাবাসের তত্ত্বাবধানে তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল আরও উন্নত হতে পারে। এই মরসুমে তারা প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে চায় এবং শেষ পর্যন্ত আইলিগ ট্রফি জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়।
এখন শুধু দেখার বিষয় যে তারা পরবর্তী ম্যাচগুলোতে কীভাবে নিজেদের ফর্ম বজায় রাখে এবং এডমন্ড লালরিনডিকা, জনি কাউকো, এবং সুমিত পাসি’র মতো ফুটবলাররা তাদের কাঁধে ভর করে আরও জয় পেতে সক্ষম হয় কিনা।
কাশী ফুটবল ক্লাব একটি দুর্দান্ত শুরু করেছে। এখন তাদের লক্ষ্য হলো এই জয়ের ধারা বজায় রাখা এবং আইলিগ ট্রফি জয়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।