২৬/১১ মুম্বই হামলার অভিযুক্ত তাহাওয়ার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে

২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলার (26/11 Mumbai attack) অন্যতম অভিযুক্ত তাহাওয়ার রানা ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ রুখতে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কানাডিয়ান নাগরিক ও পাকিস্তানি…

US Supreme Court clears extradition of mumbai terror attack accused Tahawwur Rana to India

২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলার (26/11 Mumbai attack) অন্যতম অভিযুক্ত তাহাওয়ার রানা ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ রুখতে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কানাডিয়ান নাগরিক ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই অভিযুক্ত এর আগে মার্কিন নিম্ন আদালত এবং সার্কিট আদালতে মামলা লড়ে পরাজিত হন। তার এই আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ হিসেবে তিনি “পিটিশন ফর আ রিট অব সার্টিওরারি” দাখিল করেছেন।

দীর্ঘ আইনি লড়াই
তাহাওয়ার রানা মুম্বই হামলার সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দাবি, ২৬/১১ মুম্বই হামলায় সরাসরি রানা জড়িত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন সার্কিট আদালত, যেখানে তিনি সর্বশেষ আবেদন করেছিলেন, সেটিও গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার আবেদন খারিজ করে।

   

রানা তার নতুন আবেদনে দাবি করেছেন যে, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে শিকাগোর একটি ফেডারেল আদালতে তিনি বিচারপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তি পান। তবে, ভারত এখন একই অভিযোগে তাকে ফের বিচার করার জন্য প্রত্যর্পণ চাইছে। তার মতে, এই পদক্ষেপ আইনের “ডাবল জিওপার্ডি” নিয়মের লঙ্ঘন।

রানা: মুম্বই হামলার এক বিতর্কিত চরিত্র
তাহাওয়ার রানা পাকিস্তানি-মার্কিন সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। হেডলি, যিনি লস্কর-ই-তৈবার সক্রিয় সদস্য ছিলেন, ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। ওই হামলায় ১৬৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে ছয়জন আমেরিকান নাগরিক ছিলেন।
হামলায় পাকিস্তানের দশজন জঙ্গি মুম্বইয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দখল বজায় রেখেছিল। তাজ হোটেল, ওবেরয় হোটেল, এবং নরিম্যান হাউসসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল জঙ্গিদের টার্গেট।

আমেরিকার আদালতের ভূমিকা
রানার বিরুদ্ধে ভারতের প্রত্যর্পণের দাবি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকান আদালতে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২০ সালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট রানাকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। নিম্ন আদালত এবং ফেডারেল আদালত, উভয়েই এই সিদ্ধান্তে সায় দেয়।

কিন্তু রানা, যিনি এখন আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন, তার যুক্তি হচ্ছে যে আমেরিকান আদালতে যখন তাকে একই অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তিনি সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান, তখন তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া অন্যায়। তার মতে, এটি “ডাবল জিওপার্ডি” (একই অপরাধে দু’বার বিচার) নিয়মের লঙ্ঘন।

আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ
এই “পিটিশন ফর আ রিট অব সার্টিওরারি” দাখিল করার মাধ্যমে রানা তার আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ শুরু করেছেন। যদি সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদন গ্রহণ না করে, তবে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ভারতের ভূমিকা ও প্রত্যাশা
ভারত, ২৬/১১ মুম্বই হামলার জন্য রানাকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতের মতে, রানা হামলার সময় লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন। প্রত্যর্পণের পর রানার বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে মামলা চলবে এবং তার দোষ প্রমাণিত হলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

প্রত্যর্পণের আন্তর্জাতিক প্রভাব
রানার আবেদনে বলা হয়েছে, “এই মামলা শুধু তাহাওয়ার রানার জন্য নয়, বরং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলবে।”

তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি বজায় থাকে, তাহলে একই অভিযোগে তাকে পুনরায় বিচার করার জন্য ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে এবং তার পরিণাম হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।

তাহাওয়ার রানা ২৬/১১ মুম্বই হামলার এক বিতর্কিত চরিত্র। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে তার আবেদন মঞ্জুর হবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে, তার প্রত্যর্পণ হলে ভারতীয় আদালতে এই মামলার বিচার শুরু হবে, যা ২৬/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

এই ঘটনা শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আইনগত এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।