ঘুষকাণ্ডে আদানীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, প্রত্যার্পণের দাবি তুলবে আমেরিকা

বিপদ বাড়ছে গৌতম আদানীর (Gautam Adani)। আমেরিকার আদালতে গত বৃহস্পতিবার ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) জমা পড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গৌতম আদানি…

Gautam adani in bribery case Us court is false claims his company

short-samachar

বিপদ বাড়ছে গৌতম আদানীর (Gautam Adani)। আমেরিকার আদালতে গত বৃহস্পতিবার ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) জমা পড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গৌতম আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ। এই অভিযোগের ফলে শুধু তাঁদের ব্যবসায়িক জীবন নয়, বরং ভারতের রাজনীতিতে তাঁদের অবস্থান নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই খবর, এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার শুরু হয়েছে। এবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে প্রত্যার্পণের জন্য ভারতের কাছে আমেরিকা দাবি করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।   

   

কুণালের হুঁশিয়ারি, ‘পুলিশকর্মীদের বাঘ পাহারায় পাঠাবো, বিরোধীদের পালটা মন্তব্য

অভিযোগ অনুযায়ী, গৌতম আদানি ও সাগর আদানি ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে আমেরিকান ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা লাভ করেছেন। আমেরিকার আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এই ঘুষ লেনদেনের প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আইনিভাবে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তবে, এসব অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর, একটি প্রশ্ন উঠেছে—তাদের বিরুদ্ধে কি সত্যিই অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে, নাকি এটি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পদক্ষেপ?

এদিকে, আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গৌতম আদানি এবং সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়া এবং সম্ভাব্য গ্রেফতারি সংক্রান্ত আইনগত পদক্ষেপ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে, আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রেয়ন পিসকে কেন্দ্র করে নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, তিনি অভিযুক্তদের গ্রেফতারির জন্য সক্রিয় হতে পারেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনজীবী রবি বাত্রা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরে সক্রিয় হতে পারেন অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রেয়ন।” এর মানে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষমতা অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর থাকবে, এবং এর জন্য তিনি আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেবেন। 

ইট,পাথর দিয়ে উন্মত্ত জনতার হামলা, দু-চোখে দৃষ্টি খোয়াল বাঘিনী

আমেরিকার আইন অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য বিদেশ বিষয়ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (Department of Justice, DOJ) সক্রিয় হয়। তবে, অভিযুক্তদের গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর বর্তায়। সেক্ষেত্রে, ভারতীয় নাগরিকদের গ্রেফতারি প্রক্রিয়া শুরু করতে অ্যাটর্নি জেনারেল আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে পারেন। বিশেষত, যদি অভিযুক্তরা বিদেশে পালিয়ে থাকেন, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করা হতে পারে।

এই ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গৌতম আদানির রাজনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানি, ভারতের অর্থনৈতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান অর্জন করেছেন। তাই, আমেরিকার আদালতে এই অভিযোগ এবং সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা দেশটির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

ভারতের রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনার প্রভাব নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। বিশেষ করে, বিরোধী দলগুলি এই সুযোগকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, কারণ আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। গৌতম আদানি এবং তাঁর ব্যবসায়িক গ্রুপের ওপর নানা ধরনের অভিযোগ উঠলেও, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের পক্ষেই সাফাই গাওয়া হয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে এগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

মমতার হুঁশিয়ারির পর পাচারের অভিযোগে ২ তৃণমূল নেতা গ্রেপ্তার, বিরোধীরা বলছে ‘আই ওয়াশ’

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনার পর গৌতম আদানি এবং তাঁর গ্রুপের ভবিষ্যৎ কী হবে? যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা হয়, তাহলে তা আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কী প্রভাব ফেলবে? পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের ওপরও কি এর কোনো প্রভাব পড়বে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও অজানা, তবে আইনগত প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আরও নতুন তথ্য প্রকাশ পেতে পারে।