দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের পুঁটিমারী ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর পুঁটিমারী এলাকায় বানী নিকেতন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী থাকল স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা অনীতা রায় অধিকারী একদল ছাত্রছাত্রীর উপর নির্যাতন চালান। শিক্ষিকার মানি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি যাওয়ার সন্দেহে তিনি প্রায় ২০-২৫ জন ছাত্রছাত্রীর জামা কাপড় খুলে তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
ঘটনার বিবরণ
গতকাল সকালবেলা অন্যান্য দিনের মতোই ক্লাস শুরু হয়। প্রথম দুটি পিরিয়ড পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু এরপর সহকারী শিক্ষিকা অনীতা রায় অধিকারী লক্ষ্য করেন, তাঁর মানি ব্যাগের চেন খোলা এবং ব্যাগে রাখা টাকা গায়েব। এই ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে যান এবং পুরো ক্লাসকে ডেকে পাঠান।
জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রছাত্রীরা কেউই দোষ স্বীকার করেনি। এরপর শিক্ষিকা নিজের হাতে ছাত্রছাত্রীদের জামা কাপড় খুলতে বলেন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতন করেন। কেউ লাঠির আঘাতে আহত হয়, কেউ আবার চাকুর হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে, শিক্ষিকা বাড়িতে ফোন করে জানতে পারেন যে ব্যাগে থাকা টাকা তিনি আসলে বাড়িতেই রেখে এসেছেন। মিথ্যা সন্দেহে ছাত্রছাত্রীদের উপর এমন আচরণ করার পরই ক্ষোভ ছড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে।
অভিভাবকদের বিক্ষোভ
এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আজ সকালে অভিভাবকরা একজোট হয়ে স্কুলে আসেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্ত শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু তাঁরা স্কুলে এসে দেখেন, অভিযুক্ত শিক্ষিকা অনীতা রায় অধিকারী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। এর পরেই অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন।
একজন অভিভাবক জানান, “আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য স্কুলে পাঠাই। কিন্তু এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ছোট ছোট বাচ্চাদের জামা কাপড় খুলে পেটানো এবং চাকুর হুমকি দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা চাই, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
প্রধান শিক্ষিকার প্রতিক্রিয়া
এদিন স্কুলে তালা ঝুলতে দেখে প্রধান শিক্ষিকা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানান, “গতকাল আমি ছুটিতে ছিলাম। আজ স্কুলে এসে দেখি তালা ঝুলছে। পরে অভিভাবকদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা জানতে পারি। সত্যি বলতে, এ ধরনের আচরণ একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আশা করা যায় না। আমি প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে অত্যন্ত লজ্জিত।”
তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট বাচ্চাদের উপর এমন শারীরিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত শিক্ষিকার প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুলে আসছেন না।
স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি
এ ঘটনার পর অভিভাবক এবং এলাকাবাসীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁরা চান, এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যেন কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্কুলে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রভাব
এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র ওই স্কুলের নয়, সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার উপর এক বিরূপ প্রভাব ফেলে। শিক্ষকরা যেখানে আদর্শ এবং স্নেহশীলতার প্রতীক, সেখানে এই ধরনের ঘটনা তাঁদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আস্থা ভঙ্গ করে। বিশেষত, ছোটদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার মানসিক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত স্থান হওয়া উচিত। কিন্তু এমন একটি ঘটনায় গোটা এলাকা হতবাক। অভিভাবকদের প্রতিবাদ এবং স্কুলে তালা ঝোলানো ইঙ্গিত দেয়, তাঁরা তাদের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।