থিতিয়ে উঠেছে আরজি কর পরিস্থিতি, মুক্তির পথে মমতার স্বপ্ন ‘কন্যাশ্রী’ সিনেমা

আরজি কর-কাণ্ডের উত্তাল পরিস্থিতি এখন প্রায় থিতিয়ে গেছে। একদিকে যেমন এই ঘটনা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল, তেমনই অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদল এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে…

Movie Based on Kanyashree Project to Release on Friday After RG Kar Situation Calms

আরজি কর-কাণ্ডের উত্তাল পরিস্থিতি এখন প্রায় থিতিয়ে গেছে। একদিকে যেমন এই ঘটনা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল, তেমনই অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদল এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক চর্চাও কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ডের পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প, বিশেষত ‘কন্যাশ্রী’, (Kanyashree)মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম স্বপ্ন, সে ব্যাপারে নতুন একটি ছবির মুক্তি যেন সময়ের সাথে মিলিয়ে ঘটে।

এই ছবির নাম ‘সুকন্যা’। এটি মুক্তি পাচ্ছে শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, এবং ছবিটির প্রযোজক হলেন সমীর মণ্ডল, আর পরিচালনা করেছেন উজ্জ্বল মিত্র। এই ছবিটি মূলত ‘কন্যাশ্রী’ (Kanyashree)প্রকল্পের আদলে তৈরি, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৩ সালে শুরু করেছিলেন, এবং রাজ্যে মেয়েদের শিক্ষা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

   

‘সুকন্যা’ ছবির কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে মমতার ‘কন্যাশ্রী’ (Kanyashree) প্রকল্পের অবদান, যেখানে মেয়েদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং তাদের ভবিষ্যতের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সমাজে সমতা আনার চেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবির অন্যান্য চরিত্রগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর নাগ, এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন।

তবে ছবিটি শুধু ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের কাহিনি নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি রাজনৈতিক আন্ডারটোনও। কারণ ছবির মাধ্যমে সরাসরি রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের উদ্যোগ এবং সামাজিক প্রকল্পের প্রয়োগ সম্পর্কে একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আরজি কর-কাণ্ডের সঙ্গে এই ছবির একটি মজার যোগসূত্রও রয়েছে। ছবিতে যিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি হলেন শান্তনু সেন, যিনি আরজি কর কাণ্ডের সময় বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন এবং সরাসরি আরজি কর হাসপাতালের বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। এছাড়া, তিনি তৃণমূল দলের মুখপাত্রের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া, ছবিতে একটি অন্য রাজনৈতিক যোগও রয়েছে। ছবিতে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের অভিনয়ও রয়েছে। এই চরিত্রটি সরকার এবং শাসকদলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যা ছবির রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এদিকে, ছবির মুক্তি সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে নানা মন্তব্য উঠে এসেছে। অনেকেই ছবির বিষয়বস্তুর প্রশংসা করেছেন, তবে কিছু মানুষের ধারণা, এটি তৃণমূল দলের রাজনৈতিক প্রচারের একটি অংশ হিসেবেই মুক্তি পাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আগেই অনেক সমালোচনা ছিল, বিশেষত আরজি কর-কাণ্ডের পর। কিন্তু ‘সুকন্যা’ ছবির মাধ্যমে আবারো দল ও সরকারের প্রচেষ্টা এবং তাদের সামাজিক প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পদক্ষেপ যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। ‘সুকন্যা’ ছবিটি সেই প্রকল্পের মহিমাকে তুলে ধরবে, তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি নতুন প্রশ্নও তৈরি করছে। ছবির মাধ্যমে সরকারের উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরার পাশাপাশি, এর সাথে যুক্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও এখন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এত কিছুর পরেও, ছবির মুক্তি অনেকের কাছেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রাজ্য সরকারের উদ্যোগ এবং সামাজিক প্রকল্পগুলো নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে একটি ইতিবাচক ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছবির মাধ্যমে দর্শকরা শুধু ‘কন্যাশ্রী’-র সাফল্যই নয়, বরং এর পেছনে থাকা কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার কথা জানতে পারবেন, যা সরকারের সামাজিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে।

এখন দেখার বিষয় হল, এই ছবির মুক্তি রাজ্যবাসীর কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, এবং এর মাধ্যমে কী ধরনের সামাজিক বা রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে পড়বে।