আরজি কর কাণ্ডে বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে রাজ্য নিতে পারবে পদক্ষেপ, ঘোষণা কেন্দ্রের

কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা উঠেছে যেখানে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা আইপিএস অফিসার বিনীত গোয়েল এর বিরুদ্ধে তিলোত্তমা নামের (R G Kar) নির্যাতিতার…

vineet-goyal-and-mamata-banerjee

কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা উঠেছে যেখানে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা আইপিএস অফিসার বিনীত গোয়েল এর বিরুদ্ধে তিলোত্তমা নামের (R G Kar) নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এই মামলা যে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। আরজি কর(R G Kar)  কাণ্ডের সময় প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বারবার তিলোত্তমার নাম মুখে এনেছিলেন, যা নিয়ে গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়ই কলকাতা হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মামলা দায়ের করা হয়।

আইনজীবী অনামিকা পাণ্ডে এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, বিনীত গোয়েল তিলোত্তমার নাম প্রকাশ করে আইনভঙ্গ করেছেন। এটি ছিল স্পষ্টতই একটি গুরুতর অভিযোগ, কারণ মামলার নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা আইন বিরুদ্ধ এবং এটি সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এই মামলার প্রেক্ষিতে, আদালতে শুনানি হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে প্রধান বিচারপতি টিএম শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ নোটিস ইস্যু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

   

এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য এসেছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, যে রাজ্যে সংশ্লিষ্ট আইপিএস অফিসার কর্মরত, সেই রাজ্যই পদক্ষেপ নিতে পারবে তার বিরুদ্ধে। তবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে, এই মামলায় কেন্দ্রকে বাদ দেওয়া হোক এবং রাজ্য সরকারের হাতে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার থাকবে।

কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে কেন্দ্র আরও জানিয়েছে যে, নির্যাতিতার নাম প্রকাশের বিষয়টি খুবই গুরুতর এবং যদি এটা সত্যি হয়, তবে আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তবে এই মামলা প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, যে মূল আরজি কর কাণ্ডের মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এর ফলে, সেই মামলাতেই নির্যাতিতার নাম প্রকাশের বিষয়টি আলোচিত হবে।

এদিকে, কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ উঠে আসায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনাটি পুলিশের মধ্যে আরও সতর্কতা এবং পেশাদারিত্বের অভাবের ইঙ্গিত দেয়।

আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ

আরজি কর কাণ্ড ছিল এক অত্যন্ত আলোচিত ঘটনা, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। আরজি কর নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছিল, এবং এই ঘটনায় বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। এই কাণ্ডের সঙ্গে তিলোত্তমার নামও জড়িত ছিল, যা সেসময় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, বহু বিশ্লেষক মনে করছেন যে, তিলোত্তমার নাম প্রকাশ করা একটি বড় অপরাধ, কারণ এটি তার সুরক্ষা ও মর্যাদার প্রতি আঘাত। তবে বিনীত গোয়েল এবং তার সমর্থকদের যুক্তি ছিল, যে মামলার তদন্তের জন্য তিলোত্তমার নাম প্রকাশ করা অপরিহার্য ছিল, যদিও আইন অনুযায়ী এমন কিছু করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

আইনজীবী অনামিকা পাণ্ডে এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যে পুলিশ কমিশনার হিসেবে বিনীত গোয়েল কতটুকু সতর্ক ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য একটি কঠোর আইন থাকা উচিত, যাতে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারে এবং নির্যাতিতাদের অধিকার রক্ষা করতে পারে।

এখনো পর্যন্ত এই মামলার শুনানি চলছে এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, বিনীত গোয়েল বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই মামলার গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ এটি পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ এবং সঠিক আচরণের ওপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে।

এছাড়া, এই ঘটনার পর আরও একবার মনে পড়ে যায়, যে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এবং এমন ঘটনা পুনরায় ঘটানোর সুযোগ কতটা রোধ করা যেতে পারে।

এদিকে, আদালত এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত এবং পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং নির্যাতিতাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।