বীরপাড়া শহরে যানজট কমাতে নয়া উদ্যোগ পুলিশের

আলিপুরদুয়ার (alipurduar) জেলার মাদারিহাট চা বলয়ের অন্যতম জনপদ বীরপাড়া, যা তার সুস্বাদু চায়ের জন্য পরিচিত, তবে একই সঙ্গে সেখানকার যানজট সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের জন্য…

New Initiative by Police to Reduce Traffic Congestion in Birpara Town.

আলিপুরদুয়ার (alipurduar) জেলার মাদারিহাট চা বলয়ের অন্যতম জনপদ বীরপাড়া, যা তার সুস্বাদু চায়ের জন্য পরিচিত, তবে একই সঙ্গে সেখানকার যানজট সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, বীরপাড়ার (alipurduar) রাজ্য সড়ক দিয়ে দিনে প্রায় দুশো ডলোমাইট বোঝাই ডাম্পার এবং শতাধিক মাল বোঝাই ট্রাক চলাচল করে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া, বীরপাড়াকে (alipurduar) দুটি অংশে বিভক্ত করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ডুয়ার্স রুটের রেলপথ, যেখানে দলগাঁও স্টেশনের লেভেল ক্রসিংও রয়েছে। এই ক্রসিংয়ের কারণে দিনের বেলা যানজট আরও তীব্র হয়ে ওঠে, বিশেষত মুমূর্ষু রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি এই যানজটের (alipurduar)কারণে কিছু মৃত্যু ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাদারিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে, বীরপাড়ার যানজট ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

   

জেলা পুলিশের উদ্যোগ
নির্বাচনের পর বীরপাড়ার যানজট সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে আলিপুরদুয়ার (alipurduar) জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে দিনের পরিবর্তে রাতের বেলায় ডলোমাইট বোঝাই ডাম্পার চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুলিশের মতে, যদি পাগলি ভুটান থেকে আসা ডলোমাইট বোঝাই ডাম্পারগুলো রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত চালানো যায়, তবে বীরপাড়ার যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

বীরপাড়া (alipurduar)থানার ওসি নয়ন দাস এই প্রস্তাবটি ডাম্পার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সামনে রেখেছিলেন, এবং তারা এতে সায়ও দিয়েছেন। ডাম্পার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিকাশ গুরুং বলেন, “বীরপাড়ার মানুষের স্বার্থে আমরা জেলা পুলিশের প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। তবে আমাদের জানানো হয়েছে যে, রাতে গড়পড়তা তিন থেকে চারটি ট্রিপ করা যেত, তবে এখন রাতে একটিই ট্রিপ করা যাবে। যেহেতু সকাল ৭টা থেকে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে, সেহেতু আমাদের কিছু লোকসান হলেও সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আমরা তা মেনে নিয়েছি।”

রেল কর্তৃপক্ষের আপত্তি
তবে, জেলা পুলিশের এই প্রস্তাবে এখনও পর্যন্ত রাজি হয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম জানান, “রাতে ডলোমাইট পরিবহণে কাস্টমসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যার কারণে আমাদের কিছু সমস্যা তৈরি হবে। তবে, আমরা মুজনাই স্টেশনে বিকল্প ডলোমাইট ইয়ার্ডের কাজ শুরু করেছি, যা বীরপাড়ার ডলোমাইট দূষণ এবং যানজটের স্থায়ী সমাধান হবে।” এর মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ ডলোমাইট পরিবহণের জন্য আরও নিরাপদ এবং সুবিধাজনক ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়, যাতে বীরপাড়া এবং তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে যানজট কমানো সম্ভব হয়।

দূষণ ও যানজটের স্থায়ী সমাধান
যদিও জেলা পুলিশের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বীরপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমরা বীরপাড়া বাসীর জন্য বদ্ধপরিকর। খুব শীঘ্রই এই পরিকল্পনা কার্যকর হবে, যাতে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়।”

বীরপাড়া শহরের যানজট ও দুর্ঘটনা সমস্যা শুধুমাত্র একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য ও পরিবহন সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন, এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও সময়ের মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছেন না, যা তাদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। এদিকে, ধুলাবালি এবং ডলোমাইট পরিবহণের কারণে পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

রাতের বেলা ডাম্পার চলাচল বন্ধ করলে দিনে পরিবহন কমানো সম্ভব হবে, তবে একে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পরিণত করতে হবে, যেখানে দূষণ কমানো এবং যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও আধুনিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নতুন সড়ক নির্মাণের সম্ভাবনা
বীরপাড়ার যানজট নিরসনে শুধু রাতের বেলা ডাম্পার চালানোর প্রস্তাব নয়, স্থানীয় প্রশাসন আরও কিছু প্রকল্প নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। বিশেষত, নতুন সড়ক নির্মাণ, রেল ক্রসিংয়ের সংস্কার এবং নিরাপদ রাস্তা তৈরির প্রস্তাবনা আলোচনায় রয়েছে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন যদি এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়, তবে দ্রুত একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব।