আজ সকাল সাতটা নাগাদ কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের (Victoria Memorial) সামনে এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একঝাঁক সেনা, পুলিশ এবং আধিকারিকদের উপস্থিতিতে, বাইরে এবং ভিক্টোরিয়ার ভিতরে চলছিল তীব্র গুলির লড়াই (Victoria Memorial)। দৃশ্যটি দেখে এক মুহূর্তের জন্য মনে হতে পারে, আবারও ২৬/১১’র মতো কোনো ভয়াবহ হামলার মুখে পড়েছে দেশ।
তবে, বাস্তবে এটি ছিল ভারতের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর একটি মহড়া (Victoria Memorial) , যা প্রতি বছর ২৬/১১ হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়। এই মহড়ার (Victoria Memorial) উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অতীতের ট্র্যাজেডির স্মৃতি রক্ষার নয়, বরং ভবিষ্যতে সেরকম কোনো বিপদ থেকে দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে প্রস্তুতি জোরদার করা (Victoria Memorial) ।
২৬/১১ হামলার ঘটনাটি আজও ভারতের ইতিহাসে একটি গভীর দাগ রেখে গেছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিরা মুম্বইয়ের তাজ হোটেল, অপেরা হাউস এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছিল। তাজ হোটেলের বিখ্যাত গম্বুজের পিছনে তখন লেগেছিল আগুন, আর এই ভয়াবহ দৃশ্য (Victoria Memorial) একটিই বার্তা দিয়ে ছিল—দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে। তিন দিন ধরে চলে এই হামলার মধ্যে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং অনেককে অপহৃত করা হয়েছিল। তবে, ভারতীয় সেনা, নেভি, এনএসজি এবং অন্যান্য বাহিনীর সাহসী অভিযান শেষে অপহৃতদের উদ্ধার করা হয় এবং হামলাকারীদের অধিকাংশকে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনাটি ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশের জন্য একটি বড় শিক্ষা ছিল। তাই প্রতিবছর ২৬/১১’র দিনটি স্মরণ করার জন্য এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলার মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিশেষ মহড়ার আয়োজন করা হয়। এবছর, কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ছিল সেই মহড়ার কেন্দ্রবিন্দু। এই মহড়ায় অংশ নেন সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে যে মহড়াটি অনুষ্ঠিত হয়, তাতে একটি মডেল সিচুয়েশন তৈরি করা হয় যেখানে একটি ভিআইপি (বিশেষ ব্যক্তিত্ব) অপহৃত হয়ে জঙ্গিদের হাতে চলে যায় এবং সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার করতে অভিযান চালায়। এই মহড়াটি বাস্তবসম্মত ছিল, যেখানে সেনারা ভয়ংকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের দক্ষতা ও সাহস প্রদর্শন করে। এটি একধরনের ‘সোলো মিশন’ ছিল যেখানে সেনারা হ্যান্ডস-অন মেথডে শত্রু মোকাবিলা ও অপহৃতদের উদ্ধার করার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ ব্যবহার করেছে।
মহড়ার অংশ হিসেবে, ভিক্টোরিয়ার ভিতরে একাধিক ভিআইপি আটকে পড়ে ছিলেন এবং তাদেরকে উদ্ধার করতে সেনারা তৎপরভাবে গুলি চালাচ্ছিল। বাহিরে, সেনারা বন্দুক উঁচিয়ে লক্ষ্য করে রেখেছিল এবং যে কোনো মুহূর্তে গুলি চালানোর প্রস্তুতিতে ছিল। এই ধরনের মহড়া সেনাবাহিনীর দক্ষতা এবং প্রস্তুতির মূল্যায়ন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাহিনীর সদস্যদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে এবং তাদের সেরা কার্যক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।
এটি শুধুমাত্র একটি মহড়া ছিল, কিন্তু এটি ২৬/১১ হামলার ভয়াবহতা ও দেশকে যা শিখিয়েছে তার স্মৃতিকে সতেজ করেছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য সুরক্ষা বাহিনী তাদের দক্ষতা উন্নত করতে এবং যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে এই ধরনের মহড়া আয়োজন করে থাকে।
কলকাতায় এই মহড়ার আয়োজনের মাধ্যমে, একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়, তেমনি অন্যদিকে সবার মধ্যে একটি সতর্কতা এবং সচেতনতা বাড়ানো হয়। বিশেষত, শহরগুলিতে যেকোনো প্রকারের হামলা বা অস্থিরতা মোকাবিলায় স্থানীয় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কিভাবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তা শিখতে সহায়ক হয়।
এছাড়া, এই মহড়া সাধারণ জনগণের মধ্যে একটি বার্তা পৌঁছে দেয় যে, সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদ ও অন্য যেকোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সদা প্রস্তুত। তবে, এই মহড়ার মাধ্যমে যাদের সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তারা হলো সেনাবাহিনী এবং পুলিশের সদস্যরা, যারা বাস্তব জীবনে যদি কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তারা যেন তা দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করতে পারেন।
প্রতিবছর এই ধরনের মহড়ার আয়োজন ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচির একটি অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা শুধু বাহিনীর সদস্যদের জন্য নয়, দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২৬/১১’র মতো ভয়াবহ ঘটনা যদি পুনরায় কখনো ঘটে, তবে যেন আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সাড়া দিতে সক্ষম হয়।