গত বুধবার সন্তোষ ট্রফির (Santosh Trophy) গ্ৰুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে বিহারের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল বাংলা ফুটবল দল। ম্যাচের শুরু থেকেই একাধিক সুযোগ সৃষ্টি হলেও গোল করার ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থ হন বাংলার আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে গোলশূন্য ড্রয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ম্যাচ। এই ফলাফলে হতাশ শুধু ফুটবলপ্রেমীরা নয়, বাংলা দলের কোচ সঞ্জয় সেনও (Sanjoy Sen)।
স্বপ্নভঙ্গ বাংলা দলের
গ্ৰুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল সঞ্জয় সেনের ছেলেদের। তবে এই ড্রয়ের ফলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাকে। ম্যাচের পর কোচ সঞ্জয় সেন বলেন, “আমরা টার্গেট রেখেছিলাম তিনটি ম্যাচেই জিতব। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। ড্রেসিংরুমে ফুটবলাররা এমনভাবে বসে আছে, মনে হচ্ছে যেন তারা হেরে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগের দিন যে দলটা আমাদের কাছে হেরেছিল, তারাই বিহারকে পাঁচ গোল দিয়েছিল। কিন্তু সেই বিহার আজ আমাদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিল। উত্তরপ্রদেশ, যারা আমাদের কাছে সাত গোল খেয়েছিল, তারাই ঝাড়খণ্ডকে হারিয়েছে। এই ফলাফল দেখিয়ে দিল ফুটবলে প্রতিযোগিতা কতটা কঠিন এবং অন্যান্য রাজ্য কতটা উন্নতি করেছে।”
পেনাল্টি মিস, হাতছাড়া সুযোগ
ম্যাচ চলাকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি হাতছাড়া করেন রবি হাঁসদা। সেই মুহূর্তটিই হয়ে ওঠে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সঞ্জয় সেন পেনাল্টি মিসের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “এটা কোনও অজুহাত নয়, এটা ফুটবলের অংশ। তবে আমাদের এই মুহূর্তগুলো কাজে লাগানো উচিত ছিল।”
বাংলার খেলার মান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা দর্শকদের উদ্দেশ্যে সঞ্জয় সেন বলেন, “অনেকেই ভাবছে আমরা দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলছি। কিন্তু তামিলনাড়ু অন্ধ্রপ্রদেশকে আট গোল দিয়েছে। ফুটবল এখন আগের চেয়ে অনেক প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। আমরা যতটা ভাবি, ম্যাচগুলো ঠিক ততটাই কঠিন।”
ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা
কঠিন সময়েও কোচ তার দলের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন। “ফলাফল আশানুরূপ না হলেও ছেলেদের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তারা মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।” তিনি আরও বলেন, “মূল পর্বের জন্য শীঘ্রই প্রস্তুতি শুরু করব। আমাদের লক্ষ্য এখনও অপরিবর্তিত।”
মূল পর্বের জন্য প্রস্তুতি শুরু
গ্ৰুপ পর্ব শেষে বাংলা এখন তাকিয়ে মূল পর্বের দিকে। সঞ্জয় সেন জানিয়েছেন, মূল পর্বে ভাল পারফরম্যান্স করার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং অনুশীলন শীঘ্রই শুরু হবে। ফুটবলারদের মানসিকতা দৃঢ় রাখার পাশাপাশি খেলার মান বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
ফুটবলপ্রেমীদের হতাশা
বাংলার খেলা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে হতাশা স্পষ্ট। সন্তোষ ট্রফির মতো প্রতিযোগিতায় বাংলার মতো দল থেকে সমর্থকরা আরও ভাল পারফরম্যান্স আশা করেছিলেন। বিহারের সঙ্গে ড্র তাদের প্রত্যাশায় জল ঢেলেছে। তবে অনেকে এখনও আশাবাদী, মূল পর্বে বাংলা ঘুরে দাঁড়াবে এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে।
সঞ্জয় সেনের বার্তা
শেষ পর্যন্ত, সঞ্জয় সেন তার খেলোয়াড়দের প্রতি আস্থা রাখছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দল সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে এবং কঠোর পরিশ্রম করলে আরও উন্নতি সম্ভব। সমর্থকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “ফুটবল একটি খেলা, যেখানে উত্থান-পতন স্বাভাবিক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব মূল পর্বে নিজেদের প্রমাণ করতে।”
সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার বর্তমান অবস্থান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেও কোচ এবং ফুটবলারদের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আরও উন্নত পারফরম্যান্স প্রদানের প্রতিশ্রুতি সমর্থকদের আশা ধরে রাখতে সাহায্য করছে। এখন দেখার, মূল পর্বে বাংলার দল তাদের পুরনো সুনাম পুনরুদ্ধারে কতটা সফল হয়।