কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সহ পাঁচ জনের জামিন (Bail) নিয়ে শুনানির পর বিচারপতিদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে পার্থদের জামিন মঞ্জুর করেছেন, সেখানে বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় তা প্রত্যাখ্যান (Rejection) করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে মামলা নতুন জটিলতায় পড়েছে এবং মামলার ভবিষ্যৎ এখন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের উপর নির্ভর করছে। বিচারপতি সিংহ রায়ের (Justice Singh Ray) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, তিনি জামিন মঞ্জুর করতে রাজি হননি, কারণ তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেছেন, যা মামলাটির পরিস্থিতিকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়েছে।
প্রথমত, বিচারপতি সিংহ রায় (Justice Singh Ray) মনে করেন যে রাজ্য সরকারের একটি অংশ অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে। সিবিআই আদালতে জানিয়েছিল যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ট্রায়াল শুরু করতে রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন, যা ইতিমধ্যে মেলে গিয়েছে। তবে, বাকি অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যারা রাজ্য প্রশাসনের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে ট্রায়াল শুরু করতে মুখ্যসচিবের অনুমতি প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সেই অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। সিবিআইয়ের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল যে রাজ্য প্রশাসন এই অনুমতির জন্য দেরি করছে, এবং বিচারপতি সিংহ রায় বিশ্বাস করেন, এই দেরির পেছনে সরকারের একটি অংশের ইচ্ছাকৃত অগোচরে থাকার চেষ্টা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিচারপতি সিংহ রায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, সিবিআইয়ের তদন্তে কোনো অযথা দেরি হচ্ছে না। তিনি বলেন, সিবিআই মামলার তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নিচ্ছে, এবং তদন্তের গতি মন্থর হওয়াটা কোনোভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের দুর্বলতা প্রমাণ করে না। তাঁর মতে, সিবিআই তদন্ত নিয়ে দেরি হওয়ার জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা তার সহযোগীরা দায়ী নয়।
তৃতীয়ত, বিচারপতি সিংহ রায় আরও উল্লেখ করেছেন যে এই নিয়োগ দুর্নীতির মূল ষড়যন্ত্রকারীরা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগীরা। তিনি বলেন, ‘‘যদিও অন্যান্য কিছু অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন, তবে তাদের সঙ্গে পার্থদের তুলনা করা যায় না।’’ বিচারপতি সিংহ রায় মনে করেন, পার্থ এবং তার সহযোগীরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং তাঁদের জামিন হলে তারা তদন্তের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারেন।
চতুর্থত, তিনি উল্লেখ করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ পাঁচ জনের জামিন না দিলে আরও তদন্তের পথ খোলা থাকবে এবং তারা যদি জামিন পান, তবে মামলার তথ্যপ্রমাণ ধ্বংস হতে পারে বা সাক্ষীদের উপর প্রভাব খাটানো হতে পারে। সেজন্য, তিনি মনে করেন, জামিন দেওয়া একেবারেই উপযুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে, তিনি মামলার রায়ের কপি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ট্রায়াল কোর্টের কাছে পাঠানোর জন্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধ করেছেন।
অন্যদিকে, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়ে পার্থ এবং তার সহযোগীদের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যতই গুরুতর অভিযোগ থাকুক, কাউকে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা দেশের আইনের বিরুদ্ধ।’’ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কোনো অভিযুক্তকে জামিন না দেওয়া মানে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা, যা আইনের পরিপন্থী। তাঁর মতে, তদন্তে সিবিআই যদি নতুন তথ্য পায়, তবে তারা আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তবে, তাঁকে মনে হয়েছে যে, অভিযুক্তদের কারাগারে রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই।
এই মামলার ভবিষ্যৎ এখন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের উপর নির্ভর করছে, যেখানে জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, কোর্টের পরবর্তী সিদ্ধান্তে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তার সহযোগীরা জামিন পান, তবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের গতিপথে কোনো প্রভাব পড়বে না, এই বিষয়ে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আদালত, তদন্ত সংস্থা এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে মামলার ভবিষ্যৎ এখন আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।