জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu Kashmir) বিদ্যুৎ সরবরাহে (power outage) নতুন সংকট (crisis) তৈরি হয়েছে। শীতের শুরুতেই বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হতে পারে। বিশেষ করে, জম্মু ও কাশ্মীরের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বর্তমানে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ২০০০-২১০০ মেগাওয়াট, কিন্তু প্রাপ্ত বিদ্যুৎ মাত্র ১৬০০-১৬৫০ মেগাওয়াট। এর ফলে উপত্যকায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংকট রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরে লোডশেডিং সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। অনেক এলাকাতে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার খবর এসেছে। এই সংকট সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ঘোষণা করেছেন, চাহিদা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর গ্রিড থেকে অতিরিক্ত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
বিদ্যুৎ সংকটের পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ রয়েছে। একদিকে, কাশ্মীরের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জলাধারের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। বিশেষত, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “কাশ্মীরের পাওয়ার গ্রিড থেকে বর্তমানে মাত্র ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, আর চেনাব উপত্যকার একটি পাওয়ার গ্রিড থেকে আমরা সাধারণত সন্ধ্যা এবং গভীর রাতে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি।”
অন্যদিকে, শীতের মৌসুমে তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের (পিডিডি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “পুরো অঞ্চলের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট, তবে বর্তমানে আমরা ইউটি পুল থেকে প্রায় ২০০-২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।”
এছাড়া, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা ছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির অভাব এবং শীতকালে নদী-নালার জলস্তর কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষ করে, কাশ্মীরের নদী-নালায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমে যাওয়ায় জলাধারের জলস্তর আরও নিচে নেমে গেছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো কমে গেছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় জলাধারের পরিমাণও কমে এসেছে।
এই সংকটের কারণে কাশ্মীরের শহর এলাকাগুলোতে প্রায় ৬ ঘণ্টার বেশি এবং গ্রামীণ এলাকায় ৮ ঘণ্টারও বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার খবর পাওয়া গেছে। শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও তেমন বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে খরার কারণে পানির স্তর কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার এবং জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের আবেদন করেছেন। তবে, আগামী দিনগুলিতে শীতকালীন তীব্রতা ও বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখনকার সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, শক্তি ব্যবস্থাপনায় নতুন কৌশল গ্রহণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি হয়ে উঠেছে। এদিকে, বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে, শীতকালে জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের আরও বড় সংকটের সম্মুখীন হতে হতে পারে।