আগামী ২১ ডিসেম্বর রাজস্থানের জয়সলমেরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জিএসটি কাউন্সিলের (GST Council) পরবর্তী বৈঠক। এই বৈঠকে জীবন এবং স্বাস্থ্য বীমার উপর করছাড় বা কর কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে হওয়া এই বৈঠকে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত কিছু পণ্যের উপর কর রেট সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। যেমন, বোতলজাত পানি এবং ছাত্রদের জন্য খাতা, যেগুলোর কর হার বর্তমানে ১২ শতাংশ, তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে।
GST কাউন্সিলের একটি বিশেষ গ্রুপ অব মিনিস্টার্স (GoM) জীবন এবং স্বাস্থ্য বীমার উপর কর পর্যালোচনা করার জন্য অক্টোবর মাসের শেষের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী, GoM-এর পরবর্তী বৈঠক শেষে গত মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের বৈঠকে একটি সাধারণ সম্মতি ছিল যে জীবন বীমার প্রিমিয়াম এবং সিনিয়র নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমার জন্য GST প্রত্যাহার করা হতে পারে।
স্বাস্থ্য বীমায় করছাড়ের প্রস্তাব
GST কাউন্সিলের আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম এবং জীবন বীমার প্রিমিয়াম থেকে GST ছাড়। যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তবে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়ামের উপর GST ছাড় দেওয়া হবে। তবে, যদি কোনো স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তবে ১৮ শতাংশ GST ট্যাক্স বহাল থাকবে।
এটি সাধারণ মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্তদের জন্য একটি বড় সুবিধা হতে পারে, যারা স্বাস্থ্য বীমার জন্য উচ্চ প্রিমিয়াম প্রদান করেন। এদিকে, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়ামের GSTও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে, যা বৃদ্ধদের জন্য আরও ভালো সুবিধা হতে পারে।
কিছু সাধারণ পণ্যের উপর কর রেট কমানো হতে পারে
জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কিছু সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পণ্য যেমন প্যাকেজড পানির বোতল, ছাত্রদের খাতা, সাইকেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আলোচনা হবে। প্রস্তাব করা হয়েছে যে, প্যাকেজড পানির বোতলের উপর ১৮ শতাংশ কর কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। পাশাপাশি, ১০ হাজার টাকার কম মূল্যমানের সাইকেলের উপর ১২ শতাংশ GST কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এই সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহায়ক হতে পারে, বিশেষত যারা প্রতিদিন এসব পণ্য ব্যবহার করেন।
ছাত্রদের খাতার উপরেও কর কমানো হতে পারে। বর্তমানে খাতার উপর ১২ শতাংশ কর আরোপিত রয়েছে, তবে এটির কর হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। ছাত্রদের জন্য এই সিদ্ধান্তটি একটি বড় সহায়তা হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা প্রতিদিন স্কুলে খাতা ব্যবহার করে থাকে।
লোকসানের পণ্যের উপর কর বাড়ানো হতে পারে
অন্যদিকে, কিছু বিলাসবহুল পণ্যের করও বাড়ানো হতে পারে। যেমন, ১৫ হাজার টাকার উপরে দামি জুতো এবং ২৫ হাজার টাকার উপরে দামি ঘড়ির উপর কর বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে, ১৮ শতাংশ GST থাকা এই পণ্যের উপর কর হার বাড়িয়ে ২৮ শতাংশ করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই ধরনের পণ্য সাধারণ মানুষ ব্যবহার করেন না, তবে এসব পণ্যের কর বাড়ানো সরকারের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি করার একটি উপায় হতে পারে।
জিএসটি চারটি স্তরের ব্যবস্থা
বর্তমানে, ভারতের জিএসটি ব্যবস্থা একটি চার স্তরের কাঠামো অনুসরণ করে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ কর রেট রয়েছে। সাধারণভাবে, প্রয়োজনীয় এবং মৌলিক পণ্যের জন্য কর রেট কম থাকে, যেমন খাদ্যপণ্য এবং চিকিৎসা সামগ্রী। তবে বিলাসবহুল পণ্যগুলোর জন্য ২৮ শতাংশ কর ধার্য করা হয়, যা সরকারের জন্য অধিক রাজস্ব আয়ের উৎস।
জিএসটি কাউন্সিলের ২১ ডিসেম্বরের বৈঠকটি দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, জীবন এবং স্বাস্থ্য বীমা ক্ষেত্রের কর ছাড় বা কমানোর সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এর পাশাপাশি, সাধারণ ব্যবহৃত পণ্যের কর কমানোর সিদ্ধান্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজতর করবে। তবে, বিলাসবহুল পণ্যের উপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত হতে পারে, কারণ এটি শুধুমাত্র উচ্চ আয়ের মানুষদের প্রভাবিত করবে।
এখন, সবার নজর থাকবে ২১ ডিসেম্বরের বৈঠক এবং তার পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোর ওপর। আশা করা যায় যে, সরকার তাদের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করবে যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য সহায়ক হবে।