পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম (Babar Azam) টানা নজরকাড়া পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে তিনি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন, পেছনে ফেলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। বিরাট কোহলির যেখানে ১১৭ ইনিংসে ৪১৮৮ রান রয়েছে, সেখানে বাবর আজম ১১৯ ইনিংসে ৪১৯২ রান করে তাকে ছাড়িয়ে যান।
এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, যার সংগ্রহ ১৫১ ইনিংসে ৪২৩১ রান। রোহিত শর্মা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন, তাই অনুমান করা হচ্ছে বাবর শীঘ্রই তাকে ছাড়িয়ে যাবেন।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া সোমবার হোবার্টে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নেয়। মারকাস স্টইনিসের মারকুটে ইনিংসের ওপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১২ ওভারে ১১৮ রানের লক্ষ্য পূরণ করে। স্টইনিস ২৭ বলে ৬১ রান করেন, যেখানে তিনি ৫টি বিশাল ছক্কা ও ৫টি চার হাঁকান।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক জশ ইংলিস ম্যাচ শেষে বলেন, “টানা তিনটি ম্যাচ জিতে সিরিজ জেতা খুবই আনন্দের। স্টইনিস যখন এমন মেজাজে থাকে, তাকে থামানো প্রায় অসম্ভব। আজ তার একটি ছক্কা আমার দেখা জীবনের অন্যতম বড় ছক্কা ছিল।”
হোবার্টে হওয়া এই ম্যাচটি মূলত “ডেড রাবার” ছিল, কারণ অস্ট্রেলিয়া আগের দুই ম্যাচেই জয়লাভ করে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল। ব্রিসবেনে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২৯ রানে ও সিডনিতে ১৩ রানে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয়
পাকিস্তান টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতে ভালো খেললেও, তাদের ইনিংস ১৯ ওভারে মাত্র ১১৭ রানে গুটিয়ে যায়। বাবর আজম সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ হঠাৎ ভেঙে পড়ে, যেখানে অ্যারন হার্ডি ৩টি উইকেট নেন মাত্র ২১ রানে।
শাহিবজাদা ফারহান ও বাবর আজম ইনিংস শুরু করেন। রিজওয়ান না থাকায় ফারহান ওপেনিংয়ে নামেন, কিন্তু মাত্র সাত বল খেলে শূন্য রানে আউট হন। বাবর আজম ও হাসিবুল্লাহ খান দ্বিতীয় উইকেটে দ্রুত ৪৪ রান যোগ করেন। তবে হাসিবুল্লাহ ২৪ রান করে অ্যাডাম জাম্পার স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হন।
ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৭২-৪। বাবর আজমের উইকেটটি ছিল পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। তিনি একটি সুন্দর ইনিংস খেললেও, অ্যাডাম জাম্পার বলেই বোল্ড হন। এরপরে দলের রান তুলতে কেউই উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি।
স্টইনিসের ঝড়ো ইনিংস ও অস্ট্রেলিয়ার সহজ জয়
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া দ্রুত দুই উইকেট হারায়। জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ১৮ রান করেন এবং ম্যাট শর্ট মাত্র ২ রানে আউট হন। কিন্তু জশ ইংলিস ও মারকাস স্টইনিস ইনিংসের হাল ধরেন। স্টইনিস নবম ওভারে হারিস রউফের এক ওভারে ২০ রান তুলে নেন, যার মধ্যে একটি ছক্কা স্টেডিয়ামের ছাদে গিয়ে পড়ে।
ইংলিস ২৭ রান করে আউট হলে টিম ডেভিড ক্রিজে আসেন। কিন্তু স্টইনিস একাই ম্যাচ শেষ করে দেন। ২৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এবং দলকে সহজ জয় এনে দেন।
পাকিস্তানের অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা বলেন, “টি-টোয়েন্টি সিরিজে আমাদের ফলাফল হতাশাজনক। তবে আমাদের তরুণরা ভবিষ্যতে ভালো করবে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২২ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জেতা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব।”
পাকিস্তানের জন্য দুশ্চিন্তার দিক
পাকিস্তানের এই সিরিজটি তাদের জন্য একটি কঠিন শিক্ষা ছিল। তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স উন্নত করা ছাড়া তাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। বাবর আজমের ব্যক্তিগত সাফল্য সত্ত্বেও দলগত পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের ফাঁকফোকরগুলো স্পষ্ট হয়েছে।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার দলে স্পেন্সার জনসন ও অ্যারন হার্ডির মতো নতুন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এই সিরিজের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং বিশেষ করে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাবর আজমের রেকর্ড গড়ার দিনে পাকিস্তানের বড় হার দুঃখজনক হলেও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের শীর্ষস্থানে উঠে আসা বাবরের জন্য সময়ের ব্যাপার। পাকিস্তানের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হবে তাদের শক্তি পুনর্গঠন এবং দলগত পারফরম্যান্স উন্নত করা।