বায়ু দূষনের কারণে ক্রমেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি হয়ে উঠছে রাজধানী দিল্লি (Delhi Air pollution)। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধোঁয়াশার চাদরে মুড়ে রয়েছে গোটা রাজধানী। যারফলে প্রাণ ওষ্ঠাগত রাজধানীবাসীর। দিল্লি-এনসিআরের (Delhi) বায়ুদূষণ (Air Pollution) মোকাবিলায় কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিকে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। সোমবার আদালত জানায়, গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের (GRAP) অধীনে চতুর্থ স্তরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। আদালত আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে, বায়ুর মান সূচক (AQI) ৪৫০-এর নিচে নেমে গেলেও এই বিধিনিষেধ চালু থাকবে।
GRAP হলো একটি ধাপে ধাপে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা, যা দিল্লি-এনসিআর এলাকায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর করা হয়। চতুর্থ স্তর, যা সবচেয়ে কঠোর, তখনই কার্যকর হয় যখন AQI ৪৫০-এর ওপরে থাকে। এটি কার্যকর হলে নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা, গাড়ির চলাচলে নিয়ন্ত্রণ, এবং শিল্প কারখানার কার্যক্রম বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি-এনসিআরের সব রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে বিশেষ দল গঠন করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে। আদালত বলেছে, “বিধি প্রয়োগে দেরি হলে তা দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়েরই সাংবিধানিক দায়িত্ব দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।”
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে দিল্লি-এনসিআরের বায়ুদূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। AQI একাধিক জায়গায় ৪৫০ পেরিয়ে গেছে, যা “গুরুতর” স্তর হিসেবে চিহ্নিত। এর ফলে সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে শিশুরা এবং বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
‘ভারতে বসে ট্রাম্পকে জিতিয়েছি’, দাবি ওয়াইসির, মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধুলো, গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণকাজ থেকে নির্গত দূষণ, এবং শীতকালে কৃষিক্ষেত্রে পরিত্যক্ত খড় পোড়ানোর ঘটনা এই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে দেরি হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে, দূষণমুক্ত পরিবেশে বসবাস করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।
আদালত বলেছে, “পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধু কেন্দ্রের নয়, রাজ্যগুলিরও আছে। এই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে তা মানুষের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
GRAP-এর অধীনে চতুর্থ স্তরের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা সমস্যায় পড়তে পারেন।ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার সীমিত করার নির্দেশে মানুষকে বিকল্প পরিবহনের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা বর্তমান ব্যবস্থার তুলনায় অপ্রতুল।দূষণ ছড়ায় এমন শিল্প কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মানুষের জীবন এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপই এখন সময়ের দাবি।
দিল্লি সরকার এবং কেন্দ্র ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্মাণ এবং ভাঙাচোরা কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।দূষণ কমাতে রাস্তায় জল ছেটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।দূষণ ছড়ায় এমন পুরনো যানবাহনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক এলাকায় স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর মাত্র কয়েকদিন, ডিসেম্বরেই হাইড্রোজেন ট্রেন যাত্রা শুরু করছে ভারতে
পরিবেশবিদরা সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে দিল্লি-এনসিআর এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
গণপরিবহনের পরিকাঠামো আরও উন্নত করা।
কৃষি ক্ষেত্রে খড় পোড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া বায়ুদূষণের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।