ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনালেন জিথিন

শেষ কয়েক সিজন ধরেই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন জিথিন মাদাথিল সুব্রান (Jithin Madathil Subran )। ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার তার দক্ষতা…

Jithin MS Shares His Idol Inspiration and National Team Journey

শেষ কয়েক সিজন ধরেই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন জিথিন মাদাথিল সুব্রান (Jithin Madathil Subran )। ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার তার দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে দলের আক্রমণ ভাগে একটি স্থায়ী নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান কোচ পেদ্রো বেনালির দায়িত্বকাল—দল পাল্টালেও জিথিনের দায়িত্ব এবং গুরুত্ব বাড়তেই থেকেছে।

Advertisements

বিশেষ করে গত সিজনে স্প্যানিশ কোচ জুয়ান পেদ্রো বেনালির অধীনে জিথিনের পারফরম্যান্স অনেকের নজর কাড়ে। যদিও নর্থইস্ট ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান সুপার লিগে বড় সাফল্য পায়নি, তবু জিথিন তার একক দক্ষতায় মাঠে চমক দেখান। তার পারফরম্যান্স এতটাই নজর কাড়ে যে মরসুমের শুরুতে তাকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে একাধিক ক্লাব। তবে নর্থইস্ট ইউনাইটেড সব প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে তাকে নিজেদের সঙ্গে ধরে রাখতে সফল হয়।

   

ডুরান্ড কাপের স্মরণীয় জয়
এই মরসুমের শুরুর দিকেই জিথিন নিজের গুরুত্বের প্রমাণ রাখেন। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নর্থইস্ট ইউনাইটেড ডুরান্ড কাপ জেতে। এই ঐতিহাসিক জয়ে জিথিনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ের দলটির আক্রমণ ভাগে তার উপস্থিতি প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে চাপে ফেলে দেয়।

ডুরান্ড কাপের পর ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও তার পারফরম্যান্স নজরকাড়া। আলাউদ্দিন আজিরেইয়ের সঙ্গে তার সমন্বয় নর্থইস্ট ইউনাইটেডের আক্রমণ ভাগকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ জিথিন জাতীয় দলের কোচদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। প্রাক্তন কোচ ইগর স্টিমাক হোন বা বর্তমান কোচ মানোলো মার্কুয়েজ—সবাই তাকে জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

ফুটবলের প্রতি জিথিনের ভালোবাসা
জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা জিথিন সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের সংগ্রাম এবং ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার কথা শেয়ার করেন। তার কথায়, ফুটবল তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। তিনি বলেন,

“যখন আমি ছোট ছিলাম, আমরা যথেষ্ট গরিব ছিলাম। আমার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর শ্রমিক। তিনি ত্রিশুরের ওল্লুর থেকে নারকেল বয়ে আনার কাজ করতেন। আজ আমি যা আছি তাঁর জন্যই। এখন আমার একটা বাড়ি আছে যেটা আমি ফুটবলের টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ফুটবল আমাকে সবকিছু দিয়েছে।”

তার এই কথা সমর্থকদের মন ছুঁয়ে যায়। ফুটবলের প্রতি তার আবেগ এবং সংগ্রামের কথা জেনে অনেকেই তার প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হন।

Advertisements

জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুতি
বর্তমানে জিথিন জাতীয় দলের ক্যাম্পে মালয়েশিয়া ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ভারতীয় দলের জার্সি পরে

মাঠে নামা তার জীবনের অন্যতম গর্বের বিষয়। তিনি আরও বলেন,

“ভারতীয় দলের জার্সি পরে মালয়েশিয়া ম্যাচ খেলার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। এখানেও নিজের সেরাটা আমি দিতে চাই।”
জাতীয় দলে তার এই দাপুটে পারফরম্যান্স দেশের ফুটবলে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

জিথিন মাদাথিল সুব্রানের জীবনের গল্প শুধুমাত্র একটি ফুটবলারের সাফল্যের গল্প নয়, এটি পরিশ্রম এবং সংকল্পের একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ। তার সংগ্রামী জীবন এবং ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা প্রমাণ করে, যদি ইচ্ছা এবং অধ্যবসায় থাকে তবে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তার এই যাত্রা তরুণ প্রজন্মকে নতুন স্বপ্ন দেখার এবং সেটি অর্জনের অনুপ্রেরণা জোগাবে।

নর্থইস্ট ইউনাইটেড এবং জাতীয় দলের হয়ে তার পারফরম্যান্স ভারতীয় ফুটবলে আরও বড় সাফল্য আনবে বলেই আশা করা হচ্ছে।