প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারানসী। আর সেখানেই ঘটল এক আশ্চর্য কান্ড। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বারাণসীর (Varanasi) মালহিয়া গ্রামের অন্তত ৪০ জন অবিবাহিত কন্যা সম্প্রতি একটি বিভ্রান্তিকর ও অস্বস্তিকর বার্তা পেয়েছেন, যেখানে তাদেরকে গর্ভবতী মা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বার্তাগুলি কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের পুষ্টি ট্র্যাকার (Poshan tracker) প্রোগ্রামের আওতায় পাঠানো হয়েছে। মেসেজগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে, এসব মেয়ে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এ ধরনের বার্তা পেয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে পরিবারগুলির মধ্যে। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই অস্বস্তি পড়েছে যোগী প্রশাসন।
নাবালিকা স্ত্রীয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, নিগ্রহ হিসেবে মান্যতা দিল হাইকোর্ট
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। বারাণসীর চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার (সিডিও)-এর কাছে বিষয়টি তোলা হয়। ঘটনা জানার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
মালহিয়া গ্রামে বেশ কিছু অবিবাহিত মেয়ে সম্প্রতি একটি অদ্ভুত বার্তা পান। এই বার্তাগুলিতে তাদেরকে ‘ব্রেস্টফিডিং মাদার’ বা ‘স্তন্যদানকারী মা’ বলে উল্লেখ করা হয় এবং স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে গরম খাবার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং পরামর্শ পাওয়ার কথা জানানো হয়। পরিবারের সদস্যরা এসব বার্তা দেখে বিস্মিত হয়ে যান এবং তারা এই ঘটনায় অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।
এই মেসেজগুলোতে আরও বলা হয় যে, মেয়েগুলি তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিশুর যত্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারবে। তবে এসব সুবিধার সঙ্গে অবিবাহিত কিশোরীদের কোনও সম্পর্ক নেই। ফলে এই বার্তাগুলি কেবল বিভ্রান্তিই ছড়ায়নি, বরং সামাজিকভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিরও জন্ম দিয়েছে।
এমন অপ্রত্যাশিত বার্তা পেয়ে মেয়েদের পরিবারগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ভেবেছেন, এই ধরনের বার্তা তাঁদের সামাজিক মর্যাদায় আঘাত করছে। এক পরিবারের সদস্য জানান, “আমার মেয়ে অবিবাহিত এবং সে স্কুলে পড়ে। এমন বার্তা পাওয়া সত্যিই আমাদের জন্য অপমানজনক এবং সমাজে আমাদের সম্মানের ক্ষতি করছে।”
বদ্রীনাথ ধামের দরজা বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু, আদি কেদারেশ্বরকে অন্নকুট নিবেদন
অপর একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। এটি শুধুমাত্র বিভ্রান্তিকর নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি ও সমাজের জন্য অসম্মানজনক। প্রশাসন যেন দ্রুত এই ভুল সংশোধন করে।”
চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার (সিডিও) এই বিষয়ে অবগত হয়েছেন এবং তিনি দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা এবং আমাদের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি এবং কোথাও কোনও প্রযুক্তিগত বা তথ্যভিত্তিক ত্রুটি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি।”
সিডিও আরও বলেন, “মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের পুষ্টি ট্র্যাকার প্রোগ্রাম এমন বার্তা পাঠিয়েছে, যা স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। এই বার্তাগুলি ভুলবশত অবিবাহিত মেয়েদের কাছে চলে গেছে। বিষয়টি সংশোধনের কাজ চলছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এ ধরনের বার্তার পেছনে একটি তথ্যভিত্তিক ত্রুটি বা ডেটা এন্ট্রি সমস্যা থাকতে পারে। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের পুষ্টি ট্র্যাকার প্রোগ্রামে অনেক সময় ডেটা এন্ট্রি করতে গিয়ে স্থানীয় কর্মীরা ভুল তথ্য প্রবেশ করাতে পারে। এই প্রোগ্রামে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিশুর যত্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জমা রাখা হয়, যা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে এই ক্ষেত্রে, তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই মেয়েদের নাম নিবন্ধিত হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ত্রুটি এড়ানোর জন্য ডেটা এন্ট্রি এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও যত্নশীল হতে হবে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি যেন সামাজিক সমস্যা তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।
মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের পুষ্টি ট্র্যাকার প্রোগ্রাম মূলত গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সঠিক যত্নের জন্য চালু করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে এই প্রোগ্রাম পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের মোবাইলে তথ্য প্রেরণ করা হয়, যাতে তারা সহজেই সরকারি পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন। তবে এই প্রোগ্রামের আওতায় তথ্যপ্রবাহে ভুল হলে সেটি বিভ্রান্তিকর ও অপমানজনক হতে পারে, যেমনটি মালহিয়া গ্রামে ঘটেছে।
মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক কর্মকর্তা জানান, “এই ধরনের ভুল যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডেটা এন্ট্রি এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা হবে, যাতে অবিবাহিত মেয়েদের মতো সংবেদনশীল গোষ্ঠীগুলির এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয়।”
দক্ষিণ কলকাতার আবাসনে ‘টাকার পাহাড়’, ব্যাঙ্ক থেকে এল টাকা গোনার যন্ত্র!
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। স্থানীয় কর্মীরা যেন সঠিকভাবে তথ্যপ্রবেশ করতে পারেন এবং তাদের কাজের ওপর আরও নজরদারি বাড়ানো হয়, তাতে এই ধরনের ভুল কমবে বলে আশা করা যায়।
বারাণসীর মালহিয়া গ্রামের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে অনেক সময় সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। পুষ্টি ট্র্যাকার প্রোগ্রামের মতো একটি মহৎ উদ্দেশ্যমূলক উদ্যোগও যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে সেটি সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রশাসন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষকে মিলিতভাবে এমন ঘটনা এড়াতে সচেষ্ট হতে হবে।