ভারতীয় ফুটবলে রেফারি সিদ্ধান্তের বিতর্ক দীর্ঘকাল ধরেই চলছে। বহু বার রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফুটবল মহল এবং সেই কারণেই বহু দল শাস্তির মুখে পড়েছে। একাধিকবার শোনা গিয়েছে নতুন প্রযুক্তির (VAR Technology) ব্যবহার নিয়ে, তবে সেই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়া দূরের কথা, যথাযথভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়নি। গত আইএসএল মরসুমে ফের রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা করেছিল, তবে এই বছরেও সেগুলি মাঠে নামাতে সম্ভব হয়নি। ফলে দেশের প্রথম ডিভিশন লিগে ভিএআর প্রযুক্তি চালু করা সম্ভব হয়নি, যা ফুটবল জগতের জন্য হতাশার খবর।
এই বিষয়ে এবার নিজের মতামত জানিয়েছেন চেন্নাইয়িন এফসির কোচ ওয়েন কোয়েল। এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ভিএআর প্রযুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি ভিএআর প্রযুক্তি ফুটবল ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রথমত, এটি রেফারির সিদ্ধান্তকে আরও নির্ভুল করে তোলে। দ্বিতীয়ত, এটি পরিস্থিতি অনুযায়ী রেফারির সিদ্ধান্তকে সহজতর করে তোলে, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফলাফলেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
ওয়েন কোয়েল আরও বলেন, “আমি এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে খুবই আশাবাদী। ফুটবলে, বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে যেখানে মাঠে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি এবং ভুল সিদ্ধান্ত প্রায়শই হয়, সেখানে ভিএআর প্রযুক্তি বিরাট বড় সংযোজন হতে পারে। এটি শুধু রেফারির জন্য নয়, বরং পুরো ফুটবল কমিউনিটির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।”
চেন্নাইয়িন এফসির আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং পরে জামশেদপুর এফসির সঙ্গে লিগশিল্ড জয়ের পর, ওয়েন কোয়েল পুনরায় চেন্নাইয়িনে ফিরে এসেছেন। যদিও গত সিজনে দলের জন্য সফলতা আসেনি, তবে কোয়েল এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছেন দলকে সাফল্য এনে দেওয়ার জন্য। তার মতে, ভিএআর প্রযুক্তি চালু হলে আরো স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে, যা শেষ পর্যন্ত চেন্নাইয়িনের মতো ক্লাবকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ভারতীয় ফুটবল মহলে, বিশেষ করে আইএসএল-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভিএআর প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। তবে, ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এখনও পর্যন্ত এই প্রযুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারলেও, আইএসএল বা দেশের অন্যান্য বড় লিগে একে চালু করার ক্ষেত্রে বড় বাধা এসেছে। বিশেষত, দেশের রেফারিদের প্রশিক্ষণের অভাব এবং সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট নানা জটিলতার কারণে ভিএআর বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে গেছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী, ভিএআর প্রযুক্তি চালু হওয়া ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু ভুল সিদ্ধান্তকে রোধ করবে না, বরং খেলোয়াড়দের এবং কোচদেরও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রেরণা যোগাবে।
উল্লেখযোগ্য যে, গত কয়েক বছরে ভারতে ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলির মান এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইএসএল এর মতো বড় লিগে রেফারির সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। সেই কারণে, যদি ভিএআর প্রযুক্তি চালু হয়, তবে তা ভারতের ফুটবল উন্নতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং খুঁটিনাটি বিষয়গুলি সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে, চেন্নাইয়িন এফসির কোচ ওয়েন কোয়েলের মতামত ফুটবল মহলে একটি বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভিএআর প্রযুক্তির ব্যবহার ফুটবল খেলার জন্য একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে। বিশেষত, এটি রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত হ্রাস করতে এবং ম্যাচের প্রকৃত ফলাফল জানাতে সাহায্য করবে। তবে, এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে ফুটবল মাঠে কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল সিদ্ধান্ত না হয়।